গৌ ত ম ম ণ্ড ল–র ধারাবাহিক উপন্যাস
হেঁতালপারের উপাখ্যান(১১তম পর্ব)
“My eyes drown in tears, yet thirst for but one chance
I’ll give away my whole life, for Beloved, but one glance.” গজল (৫১), হাফেজ।
বছর খানেক বাঙাল ট্রলারে ফিশিং করে শম্ভু নিজেই একটা ছোট নৌকা কিনে নিল। ছোট, কিন্তু আহ্লাদির মতো অত ছোট নয়। দাঁড় পালে চলবে। বৈঠা নয়, পিছনে হাল লাগানো। সে তার নিজের নৌকায় নিজের ইচ্ছেমতো কখনো পারসে জাল দিয়ে পারসে মাছ, কখনো দন দিয়ে কাঁকড়া আবার কখনো চরপাটা ঘিরে দেয় গংগাবুড়ির ঘাট থেকে সাউর ঘাট অব্দি। কখনো কখনো সংগে কাউকে নিয়ে মধু ভাঙতে যায় লুথিয়ানের জংগলে। মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করাকে আমরা ‘মধু ভাঙা’ বলতুম। জ্বালানি কাঠের দরকার হলে কুড়ুল নিয়ে নৌকা বেয়ে চলে যায় ওপারের ঘন জংগলে। মোট কথা শম্ভু ডাঙায় থাকে কম, জলে ভেসে থাকে বেশিরভাগ সময়। নৌকার উপর ত্রিপল দিয়ে একটা কুঁড়ে বানিয়ে নিয়েছে। তার ভিতর দু একটা বাসন, হাঁড়ি কড়াই, মুখ কাটা টিনের উপর মাটি দিয়ে তৈরি করা উনুন, দু চারটে শুকনো কাঠ, সের খানেক চাল, গোটা কয়েক আলু, তেলের শিসি এই সব থাকে। ইচ্ছে হলে ঘরে আসে, নয়তো নৌকাতেই রান্না করে খায় আর ঘাটে নোঙর করে পড়ে থাকে।
তখন গরমের ছুটি চলছে। শম্ভু ঠা ঠা দুপুরবেলা এসে বল্লে ” বারা, এক জাগায় যাবো”। আমি অবাক হয়ে বল্লেম ” কাই যাবু?”
চ’ না, যাইলে বুঝতে পারবু।
হঠাৎ ওর বাম হাতের কনুইএর উপরের দিকে চোখ পড়ল। দেখি কালসিটে দাগ। মোটা পুরু হয়ে রক্ত জমে গেছে। হাত ইশারা করে জিজ্ঞেস করলেম ” অ্যাটা কী?”
কিচ্ছুনা। চ’ তো।
না, ক’। কী অটা?
আরে কাল কাঠ ভাঙতে যায়া ফরেষ্টারের হাতে ধরা পড়িতিলি।
তার পর?
মারল শ্লারা।
লৌকা?
হাতে পায়ে ধরতেনু ছাড়িয়া দিছে।
কিছু লিচু?
কী লুবো?
একটু লাল গদের পাতা…
আমাকে থামিয়ে দিয়ে শম্ভু বল্লে ” ধুর চ তো। অটা কিচ্ছু হবেনি। এক্লা ভাল হয়াবে”।
শম্ভু
কী?
তোর খুব কষ্ট হইছে না?
কেনি?
খুব মারছে তোকে।
ধুর! গাঙ খায়ে কাজ করতে হইলে অরকুম অনেক কিছু হয়।
আর কোনো কথা না বলে বেরিয়ে এলাম ওর সংগে। পাশাপাশি হাঁটছি। মাথার উপর চড়া রোদ। রাস্তা তেঁতে গেছে। পায়ে ছ্যাঁকা খাচ্ছি। কিষ্ট মাইতির ঘেরি নামে একটা তল্লাট আছে। ফাঁকা। রোদের বেলায় শুনশান। তল্লাটের উত্তর প্রান্তে একটা ভাগাড়। একটাই বুড়ো বাবলা গাছ। সবসময় বিশ পঁচিশটা শকুন কালো হয়ে বাবলা গাছে বসে থাকে। ওর পাশ দিয়ে যেতে ভয় করে। বুক ঢিপঢিপ করে উঠে। শকুন গুলো দেখলে সাক্ষাৎ যম মনে হয়। তারপর ভাগাড় মানে গো ভুতের উৎপাত। গোরু মরার পর গো ভুত হয়ে যায়। সে তখন সাধারণ গোরুর রুপ ধরে রাস্তায় ঘোরে। গোরুর পালে মিশে যায়। সন্ধাবেলা গৃহস্থের গোয়ালেও ঢুকে যায়। রাত্রে সব গোরুকে মেরে ফেলে। ফাঁকা রাস্তায় রোদের বেলা বা রাতেরবেলা একা পেলে মানুষকেও গোভুত খুঁচিয়ে মেরে ফেলে। এসবই আমাদের শোনা। আমরা চর্ম চক্ষুতে কখনো দেখিনি। আমার ভুত নয়, ওই শকুন দেখলেই আতংকে পিলে চমকে যেত। বল্লুম ” শম্ভু, পুব দিকের রাস্তা দিয়া চ’
পুব দিকের রাস্তা ধরবো বলে বাঁক ঘুরতেই দেখলুম রাস্তার পাশে একটা টোবা। জল প্রায় নেই বল্লেই চলে। পাঁক আর পাঁক। চারটে ন্যাংটা বাচ্চা পাঁকে হাত গলিয়ে মাছ ধরছে। কত আর বয়স হবে! সাত আট বা নয়। আমরা দাঁড়িয়ে পড়লুম। একটু বড় হওয়ার সাথে সাথে আমাদের একটা পাগলামিতে ধরেছে। রাস্তায়, গাঙে, পুকুরে, খাস খালে ন্যাংটো, আধ ন্যাংটো আদুলগায়ের বাচ্চাদের দেখলেই আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজেদের চলে যাওয়া বিগত শৈশব খুঁজি।
দ্যাখ, পিছানের টকাটার মতো আমি থাইলি
না তুই মাঝখাঁয়েরটার মতো।
আগের টকাটা নুনার মতো, দ্যাখ দ্যাখ।
দ্যাখ শম্ভু, সামনের টকাটার চুলটা দ্যাখ। তোর অরকুম চুল থাইল।
একবারে শেষের টকাটা দ্যাখ, তুই অরকুম হাঁটতু।
নিজের রেপ্লিকা খোঁজার এই পাগলামিটা এখনো আছে। বাচ্চা দেখলেই দাঁড়িয়ে পড়ি। অনেক বাচ্চার ভিতর খুঁজে বেড়াই আমার ছোটবেলাকে। ঠিক কার মতো আমি ছিলাম। কার চোখের চাউনির মধ্যে আমার শৈশব কথা বলে। কার গায়ের জামার মধ্যে আমার দৈন্য লুকিয়ে আছে। কার পায়ের নখের কোনের জমাটবাঁধা কাদার ভিতর আমার এত গুলো বছর লুকিয়ে আছে। এ এক দারুণ শখ। শখ বল্লে ভুল হবে হয়তো। নিদারুণ যন্ত্রণা। যন্ত্রণাও হয়তো নয়, একটা নিবিড় ঘন অন্ধকার পেরিয়ে আসা পথের দু’ধারে ফুল কাঁটা আর হাড় জিরজিরে চেহারার কতগুলো আকৃতি যা অবিকল মানুষের মতো দেখতে, তাকে ধোঁয়ার গাঢ় আবরণের মধ্যে হাত চালান করে ধরার চেষ্টা। এ পাগলামো আমার আর শম্ভুর মধ্যে একটা সময়ে এসে প্রগাঢ় হয়েছিল।
পা চালাই আবার। প্রসংগ পাল্টে ফেলি আমি নিজে। শম্ভুকে জিজ্ঞেস করি,” আচ্ছা আমান্নে কাই যাইটি ক’তো?”
চন্দন গিরির তরমুজ বইতে।
বোট আসসে?
হঁ।
অহহ।
শম্ভু কাঁধে হাত রেখে এক চিলতে হাসি ঠোঁটের কোনে এনে বলে, “তোকে বইতে হবেনি,আমি একলা বইব, তুই বুসবু”
কেনি?
তুই পড়াশুঁআ করু, মাথায় ভারি জিনিস বইলে বুদ্ধি কমিয়াবে।
আমি ফিক করে হেসে উঠলাম।
হাসুটু কেনি? তোকে সত্যি সত্যি আমি বইতে দুবোনি।
তুই ভাল রেজাল করু। আমি জাঁই। তোকে মাথায় করিয়া আমি বইতে দুবোনি। তুই বুসবু। আমি বইব।
সত্যিই আমাকে বসে থাকতে হোল। কত লোক তরমুজ বইছে মাথায় ক’রে। শম্ভু গামছায় বেঁধে দুটো তিনটে করে বইছে একসংগে। বোট আস্তে আস্তে ভরে যাচ্ছে তরমুজে। কত বাচ্চাও বইছে। আমি শম্ভু নুনা দাদা ছোট বেলায় খড় বোট আর তরমুজ বোট এলে খড়ের তাড়ি আর তরমুজ বইতাম। সেই আমি আমিই আছি। কিন্তু শম্ভু আমাকে বইতে দিচ্ছে না। বিকেল গড়িয়ে সন্ধা ছুঁই ছুঁই। ঘেমে নেয়ে শম্ভু এল।
চ’ হইচে।
ক’টাকা হইচে শম্ভু?
২০ টাকা।
তোর হাতে তরমুজ কেনি? ঘর লিয়াবু?
না।
তা’লে?
গৌরিকে দুবো।
অহহহ
চ’
লক্ষণ আড়ির ঘরের পিছনে বাবলা গাছের কাছে গৌরি দাঁড়িয়ে। শম্ভু ওর হাতে ২০ টাকা দিল। তরমুজটা মাটিতে রাখলো।সন্ধার আবছায়া অন্ধকারে গৌরিকে জড়িয়ে ধরে একসংগে অনেক চুমু খেল।বুকে মুখ গুঁজে দিল। তারপর আস্তে আস্তে ছেড়ে দিল। তরমুজটা তুলে দিল ওর হাতে। বল্লে “যা, কাল দেখা করবু তো?”
কুন্ঠি?
ঘুরতে যাবু?
হঁ
কাল বিকাএ গাঙ ধারে আইসবু। আমি রইব।
গৌরি অন্ধকারের রাস্তা ধরে বাড়ির দিকে চল্ল। ওর যাওয়ার দিকে শম্ভু তাকিয়ে আছে। গৌরি অদৃশ্য হলে আমরা আবার হাঁটা শুরু করলুম।
°°
শম্ভু হালের বাতা একবার এদিকে একবার ওদিকে করছে। জল কেটে কেটে নৌকা এগোচ্ছে সামনের দিকে। তখন বিকেলের আয়ু বেশি নেই। সূর্য হালকা লাল রং ধারণ করে লূথিয়ানের মাথায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে যেন। গোটা জংগলটা রক্তিম হয়ে উঠেছে। একদল টিয়া একটা মালার মতো বক্ররেখাকৃতি হয়ে লাল আভা ভেদ করে জংগলের দিকে উড়ে যাচ্ছে। ওপারে একদল শেয়াল ডেকে উঠল তারস্বরে। জংগলের গা ধরে জলের উপর একটা গাঢ় লাল স্তর।
নৌকা মাঝ গাঙে এসে পড়ল। শম্ভু আমাকে ইশারায় হালের কাছে ডাকল। আমি উঠে গেলে বিনা বাক্য ব্যয়ে আমাকে হালের বাতা ধরিয়ে দিল। বল্লুম, “কুনদিকে যাবো?” শম্ভু চুলের মধ্যে আঙ্গুল গলাতে গলাতে বল্লে ” তোর যেদিকে ইচ্ছা।” আমি নৌকার গলুই লুথিয়ানের নাবার দিকে ঘুরিয়ে ধীরে ধীরে বাতা নাড়তে লাগলাম। শম্ভু নৌকার সামনের দিকে গিয়ে গৌরির গা ঘেঁষে বসল। আমি তাকিয়ে থাকলুম।
জঙ্গলের ওপারে সূর্য দ্রুত আত্মগোপন করছে। জঙ্গলের গা ধরে ধরে আমি নৌকা নিয়ে এগোচ্ছি দক্ষিণের দিকে। পাখপাখালির শব্দে লুথিয়ান মুখরিত হয়ে উঠেছে। একটা অদ্ভুত চিঁইই শব্দে আমি সচকিত হয়ে উঠলুম। শম্ভু বল্ল, “হরিণ”। আমি আগে কখনো হরিণের ডাক শুনেছি বলে মনে পড়লো না। মাঝ আকাশে ক্ষীণ চাঁদ সাদা, ছেঁড়া মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে। আমি হাল ঘোরানো থামিয়ে বাতা ধরে বসে পড়লুম।
শম্ভু জড়িয়ে ধরে আছে গৌরিকে। স্পষ্ট দেখলাম ওর হাত গৌরির সারা শরীরে ঘুরছে। মাঝে মাঝে উন্মাদের মতো চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে গৌরির গাল ঠোঁট থুতনি।
হঠাৎ সতর্কিত কন্ঠস্বর শোনা গেল শম্ভুর গলায়। “ঘরে কী কয়াসসু?”
রাধার দরে যাবো কয়াসসি।
কদবা ফিরবু কইচু?
সন্ধার আগে।
তা’লে? সন্ধা তো হইচে?
“তুমি তো ছাড়নি আমাকে” বলে একটা সুন্দর হাসি গৌরির মুখে।
“অই শ্লা অপু” শম্ভু হাঁক পাড়ে।
ক’
ঘুরা লৌকা।
কুন দিকে?
শ্লা ঘাটে চ’
আমি নৌকা ঘুরিয়ে ঘাটের দিকে যেতে লাগলাম।
তাড়াতাড়ি চ’ শ্লা।
হঁ
তাকত লাগিয়ে হালের বাতা এদিক ওদিক ঘোরাচ্ছি আর মাঝে মধ্যে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে নিচ্ছি। ভাঁটা পড়ে যাবে এক্ষুণি। তার আগেই ঘাটে ফিরে যেতে পারলে ভাল। নইলে ঘাটে ফিরতে কষ্ট হবে। শম্ভু গৌরিকে জড়িয়ে বসে আছে৷ ওকে দাঁড় ধরতে বল্লাম না। বসুক শ্লা আর একটু। কতটুকু আর সময়! এই তো ঘাটে পৌঁছে গেলাম বলে। অন্ধকারে চোখ ঠাওর করতে পারছি না। আন্দাজে এগিয়ে যাচ্ছি। ঘাটের দিকে চোখ পড়ল হঠাৎ। অনেক আলো। মনে হয় হ্যাজাক লাইট দু তিন চারখানা। স্পষ্ট বুঝছি অনেক লোক। চাপা গলায় বল্লুম “শম্ভু, ঘাটের দিকে চায়া দ্যাখ”
শম্ভু মনে হয় এরকমটা প্রত্যাশা করেনি। তার গলাটা একটু কেঁপে উঠল। কাঁপা কাঁপা গলায় বল্লে ” গৌরির ঘরের লোক জঁ মনে হয়”
গৌরি।
হঁ কও।
তোর ভয় লাগচে?
না।
কেনি?
গৌরি নিরুত্তর।
মনে হয় তোকে খুঁজেটে।
খুঁজু।
কী কউটু রে?
ঠিক কইটি।
মানে?
কিছু হইলে আইজই তুমাকে ব্যা করিয়া তুমার দরে যাবো। ঘরে যাবোনি।
শম্ভু নিতান্ত বাচ্চা ছেলের মতো করে গৌরিকে জড়িয়ে ধরল।
ঘাটে পৌঁছাবার আগেই চেঁচামেচি শুনতে পেলুম। চঞ্চলী বৌদির গলার আওয়াজ একবার করে গগনবিদারী হচ্ছে, পরক্ষণেই মিশে যাচ্ছে সম্মুখের বিশাল গাঙে। সবাই বলে গাঙ যা নেয় তা ফিরিয়েও দেয়। ভুল। ধ্বনি দিলে সে কখনো প্রতিধ্বনি ফিরিয়ে দেয় না। গিলে নেয় চকিতে। চঞ্চলী বৌদির চীৎকার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছিল ক্ষণে ক্ষণে।
ঘাট ছাড়িয়ে একটু দূরে নৌকা লাগালুম। একটা বানি গাছের সংগে নোকার কাছি বেঁধে দিলুম। শম্ভুকে বল্লাম “কী করবু?”
সে দৈত্যের মত হঠাৎ হাঁক পাড়ল “কী হইছে বৌদি?” সম্মিলিত চীৎকার থেমে গেল। নীরবতা থেকে চঞ্চলী বৌদির কান্না ভেজা গলা শোনা গেল। “আমার ঝন্টু…” সম্পূর্ণ করতে পারে না বৌদি। শম্ভু আমাকে বল্লে ” তুই গৌরিকে ঘরে দিয়ায়। আমি দেখি। মনে হয় কী একটা হইচে।”
গৌরিকে কোনোক্রমে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েই তড়িৎগতিতে ফিরে এলাম সাউর ঘাটে। লোকে লোকারণ্য। হ্যাজাক জ্বলছে গোটা তিনেক। চঞ্চলী বৌদি বাঁধের উপর মাথা ঠুকছে আর চীৎকার করে কাঁদছে।
জ্বালানি কাঠ কেটে নৌকায় ভরে ঝন্টু মণ্ডল সাউর ঘাটের সোজাসুজি লুথিয়ানের বানিচোরা খাল থেকে সবে বেরিয়েছে, অমনি ফরেষ্টারের মুখোমুখি। আতঙ্কে নৌকা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল বেচারা। তখন সন্ধ্যা হয়নি। আমরা বেরিয়ে যাবার পরে পরেই হয়তো ঘটেছিল সবকিছু। চঞ্চলী বৌদি এপারের ঘাটে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখেছে। ঝন্টুদা গাঙে ঝাঁপ দেবার সাথে সাথেই বৌদি চিল-চিৎকার শুরু করে। লোক জমে যায়। গণেশ মণ্ডল, জগাই, মন্টু সাউরা নৌকা নিয়ে তখন থেকে তাকে খুঁজছে। কিন্তু ঝন্টু মণ্ডলের চিহ্ন পায়নি তারা।
দেখলুম শম্ভুর নৌকা ঘাটে নেই। তার মানে শম্ভু নৌকা খুলে খঁজতে বেরিয়ে গেছে।
অতগুলো নৌকা উথালপাতাল করে দিচ্ছে গাঙের জল। কিন্তু ঝন্টু মণ্ডল কোথাও নেই। সব কিছুর উৎসাহ সময় গড়ালে ভাঁটার টানে কমতে থাকে। সন্ধে গড়িয়ে রাত হয়ে গেল। হ্যাজাক নিভতে শুরু করল। লোকের সংখ্যা কমতে লাগল। শুধু ঝন্টু মণ্ডলের বুড়ো বাপ আর সুবোল ঘড়ির বৌ চঞ্চলী বসে আছে। আমি কখনো বসছি, কখনো হাঁটছি বাঁধের উপর। কাছাকাছি কোনো আলো জ্বলছে না। গোটা দ্বীপটা যেন সব কিছু মেনে নিতে জানে, তাই নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েছে। শুধু তরুবালা ঠাকুমার গলা শোনা গেল অন্ধকারের স্রোতে ” খানকি, নাংখোরি গাঙ,মাগির সাধ মিটেনি। আবার একটা লিল। মুখে আগুন দেই বেবুশ্যির!”
আগের পর্বটি পড়তে ক্লিক করুন নিচের লিংকে–
গৌ ত ম ম ণ্ড ল-র ধারাবাহিক উপন্যাস–“হেঁতালপারের উপাখ্যান(দশম পর্ব)”