বাংলা ভাষা আন্দোলন ও
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
লিখছেনঃ শ্রী দুর্গাশঙ্কর দীর্ঘাঙ্গী
এই ভাষা আন্দোলন সংগঠিত
হয়েছিল তৎকালীন পূর্ব বঙ্গে
যখন পাকিস্তানের অধীনে ছিল বাংলাদেশ। ১৯৪৭ সালে
দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তি বৃটিশ ভারত ভাগ হয়েছিল এবং দুটি
স্বাধীন রাজ্য তৈরি হয়েছিল
১) ভারত অধিরাজ্য আর ২) পাকিস্তান অধিরাজ্য ।
পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের দূরত্ব ২০০০ কিমির চেয়েও বেশি। পাকিস্তানের এই দূই স্থানে
ভাষা, সংস্কৃতি, ভৌগোলিক বিবরণ সব ছিল আলাদা।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তান অধিরাজ্য সরকার ঘোষণা করে যে এই দুই জায়গায় ভাষা হবে এক। মহম্মদ জিন্নাহ ছিলেন পাকিস্তানের
প্রধানমন্ত্রী। তিনি চেয়েছিলেন
উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করতে।
পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী জনসাধারণ এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি।
১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত মৌলিক অধিকারের দাবিতে এই লড়াই চলে। পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষীদের সংখ্যা ছিল ৬০ শতাংশের বেশি।ভাষার সমমর্যাদার দাবীতে আন্দোলন তীব্র রূপ নিলে সরকার ১৪৪ধারা জারি করে
এই গণদাবী চুড়ান্ত রূপ নিয়ে ছিল১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী(৮ই ফাল্গুন ১৩৫৭) যখন এই আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্র , যুবসমাজ, প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিক্ষোভ মিছিল করে।
১৪৪ ধারা অবমাননার জন্য পুলিশের গুলিতে নিহত হন
রফিক, বরকত, আব্দুল জব্বার সহ আরও অনেকে।
১৭ জন ছাত্র যূবক আহত হন। ২২শে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে নিহত হন
শফিউর রহমান ও আরও একজন। প্রতিবাদে মুসলিম লীগ সংসদ থেকে ইস্তফা দেন।
শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে
ঢাকা মেডিকেল কলেজের
হোষ্টেল প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার তৈরি হয়। এই পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, গণ আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয়
সরকার। ১৯৫৪ সালের ৭ইমে
পাকিস্তানের গণপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে মান্যতা পায়।
১৯৫৬ সালে প্রথম সংবিধানে
২১৪ নং অনুচ্ছেদে বাংলা ও
উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা
হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দেয়।
১৯৯৯ সালের ১৭ ই নভেম্বর
ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলনের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
বাংলা ভাষা আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল আমাদের ভারতের বরাক উপত্যকায়।
১৯শে মে, ১৯৬১ সালের ভারতের আসাম রাজ্যে অসমীয়া ভাষাকে বাধ্যতামূলক করার প্রতিবাদে
বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকা, শিলচর শহরে আন্দোলন রত ১১ জন বিক্ষোভকারী পুলিশের গুলিতে মারা যান।
বহু মর্মস্পর্শী কবিতা লেখা মনে পড়ে।
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলতে পারি? –
ডা: আব্দুল গাফফার চৌধুরী
“এযে সুরেরই ভাষা, ছন্দের ই
ভাষা, তালেরই ভাষা, আমাদেরই ভাষা।
ভাষা এমন কথা বলে বোঝে রে সকলে।।
রাজা, উঁচা, নিচা ছোট বড় সমান।
আমরা এই ভাষাতেই করি গান। – সত্যজিৎ রায়।
“ফেব্রুয়ারি ২১,! ফেব্রুয়ারি ২১!
দুপুর বেলায় অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায়?
বরকতের রক্ত।
হাজার ফুলের সূর্য তাপে
জ্বলবে এমন লাল যে,
সেই লোহিত লাল হয়েছে
কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে!
প্রভাত ফেরীর মিছিল যাবে
ছড়ায় ফুলের বন্যা
বিষাদগীতি গাইছে পথে
তিতুমীরের কন্যা। “
– কবি আল মাহমুদ।
তাই বলতে হয়, মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। ভাষার চর্চা, সাহিত্য, কবিতা, গান,
বিজ্ঞান চর্চা না থাকলে একটা দেশ পিছিয়ে যায়।