জ য় ন্ত    কু মা র    ম ল্লি ক-র একটি ধারাবাহিক গদ্য(ষোড়শ পর্ব)–“অথ নেকড়ে-মানব-মানবী কথাঃ গল্প বনাম সত্যি ঘটনা”

পরিচিতিঃ জন্ম- ১৯৫২, হুগলী শহর শিক্ষাদীক্ষা স্নাতক- কবি, স্নাতকোত্তর- ববি; গবেষণাপত্রঃ উত্তরবঙ্গ উপ-হিমালয়ের বনবস্তির আর্থ-সামাজিক সমীক্ষা; প্রাক্তনী- বন্যপ্রাণ শাখা, বনবিভাগ (১৯৭৬-২০১২); জীববৈচিত্র্য-বাস্তুসংস্থান বিষয়ে গ্রন্থকার, জার্নাল-পর্যালোচক; দেশবিদেশে প্রকাশনা ১৪০। মুক্তির সন্ধানে সঙ্গীত চর্চা। বাইফোকালিজম্-র পাতায় আজ তাঁরই ধারাবাহিক গদ্য।

জ য় ন্ত    কু মা র    ম ল্লি কর একটি ধারাবাহিক গদ্য(ষোড়শ পর্ব)

অথ নেকড়ে-মানব-মানবী কথাঃ গল্প বনাম সত্যি ঘটনা

নাট্যকার মনোজ মিত্রের রাজনৈতিক অনুষঙ্গ আছে এমন নাটকের মধ্যে রয়েছে নেকড়ে (১৯৬৮), পটভূমি সুন্দরবনের এক দ্বীপ। অঞ্চলের ভূমিপুত্রদের শোষণ করে কিভাবে ফুলে-ফেঁপে উঠছে বহিরাগত শোষকশ্রেণী এবং শেষ পর্যন্ত নিপীড়িত মানুষের জাগরণ ও প্রতিশোধ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে কীভাবে শোষকের পরাজয় ঘটে সেটাই এই নাটকের উপজীব্য।
প্রথম যৌবনে কংসারী ঠাকুর এসেছিল এক বাদাবনের দ্বীপে যেখানে গ্রামবাসীর মাছ ধরে ও পশুপাখি শিকার করে খেত, আর বুনো জ্বরে কাবু হয়ে বেঘোরে মরত। এই সুযোগে লোভী কাংসারী বিনা বা নামমাত্র মূল্যে একের পর এক ক্ষেত দখল করে এবং বনজঙ্গল সাফ করেও চাষবাস করে ও জোতদার বনে যায়। শুধু তাই নয় ধান, কাঠ, মধু চালানের এক বিশাল ব্যবসা ফেঁদেছিল সে। এইভাবে সে দ্বীপের একছত্র অধিপতি বনে গেল। আক্রাম (শক্তি) ও গোঁসাই (ধর্ম) তার সব অপকর্মের সহায়ক ছিল। এছাড়া সে গ্রামের অন্য এক স্ত্রী নীহারিকাকেও ভোগদখল করে। নীহারিকা গর্ভবতী হলে কংসারীর কাছে সে তার অনাগত সন্তানের অধিকার দাবী করলে কংসারী নীহারিকাকে বিষাক্ত বুনো পাতার রস খাওয়ায়। ফলে তার গর্ভের সন্তান অদ্ভুত আকারের বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মায়। শিশুটির সারা দেহে লম্বা লম্বা চুল, হাতের তালু ও জিভ টকটকে লাল ছিল। কংসারী গোঁসাইকে সেই বীভৎস মাংসপিণ্ডকে মেরে ফেলতে বলেছিল, কিন্ত গোঁসাই তাকে না মেরে ফেলে এসেছিল দখিনের নোনা বিলে। এসব প্রায় কুড়ি বছর আগেকার কথা। এখন কয়েক মাস ধরে কংসারীর অদ্ভুত এক আতঙ্ক হচ্ছিল, সবসময় মনে হচ্ছিল কেউ যেন তাকে অনুসরণ করছে। হঠাৎ এক রাতে কংসারীর ঘরে প্রবেশ করে এক লোমশ জন্তু যাকে তার মনে হয়েছিল এক নেকড়ে। তাই সে ভয় পেতে আরম্ভ করল। সে তাই তার সমস্ত ধনসম্পত্তির উত্তরাধিকার করার জন্য ভাইপো শশাঙ্ককে তার কাছে নিয়ে এসে রাখে। তারপর আশ্চর্য জনকভাবে বেড়ে যায় নেকড়ের উৎপাত। একে একে কংসারীর দুই বুলডগ ও আক্রাম নিহত হয় রহস্যময় নেকড়ের আক্রমণে। রক্তের দাগ দেখা যায় দখিনের বিলমুখো। নানা চেষ্টা করেও নেকড়েকে ধরা যায় না। নীহারিকা যেদিন তারের বাজনা বাজায়, সেদিন রাতেই হানা দেয় নেকড়ে। এক অদ্ভুত আতংকের পরিবেশ দেখা দেয় চারদিকে। সন্ধ্যের পরে কেউ আর বাড়ির বাইরে বেরোয় না। ইতিমধ্য নীহারিকা কংসারীকে জানিয়েছে দখিনের বিলে ফেলে দেওয়া তার ছেলেকে নেকড়েরা বড় করেছে, ফলে তার সবকিছু নেকড়ের মত হয়ে গেছে আর মস্তিষ্ক রয়ে গেছে মানুষের মত। কংসারী ও শশাঙ্ককে মেরে সে তার অধিকার ছিনিয়ে নেবে। কংসারী নিজেই বিলে সেই নেকড়ে মানবকে শিকার করতে যায় এবং সেখানে মানুষের পায়ের ছাপ দেখে তার সন্দেহ হয়। আসলে নীহারিকার সেই ছেলে জন্মের কিছুদিন পর মারা যায়। কিন্তু সে প্রতিশোধ নেবার জন্য নেকড়ের গল্প লোকমুখে ছড়িয়ে দেয়। অত্যাচারিত গ্রামবাসীদের সাহায্যে সে হত্যকান্ড ঘটায়। একদিন কংসারী যখন নীহারিকাকে ভোগ করছিল তখন চুপিচুপি বুকের ভেতরে লুকিয়ে রাখা বাঘের থাবা বের করে কংসারীর চোখে বিঁধিয়ে দেয়, অন্ধ হয়ে যায় কংসারী। শশাঙ্ক গুলি করে নীহারিকাকে। এই সময় গ্রামবাসীরা এসে বাঁচায় তাকে। শেষ হয় গ্রামে শোষণ ও অত্যাচার।

লেখা পাঠাতে পারেন

আগের পর্ব পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন

জ য় ন্ত    কু মা র    ম ল্লি ক-র একটি ধারাবাহিক গদ্য(পঞ্চদশ পর্ব)

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *