প্রেমের কবিতাগুচ্ছ-কেশব মেট্যা

 কেশব মেট্যার   সাজি ভরা প্রেমের কবিতাগুচ্ছ

                           

                                ★

                                                                                              ছবিঃ গৌতম মাহাতো


           প্রেম-১ 

এ তো পাপ নয় এ তো প্রেম
বাজে কৃষ্ণবাঁশি নয় ছলনা
হারাই হারাই করে গেল দিন
হৃদয় হারালে কবে বলোনা?

কূলে বালি জমেছিল বেশ
আজ শুধু ঢেউ আর জল
রাখালিয়া সুরে ভাসছে ডিঙি
মনে মনে ইচ্ছে প্রবল।

ইচ্ছে সে খেলাঘর বাঁধে
বুকে বাজে রুমুঝুমু গান–
ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা হবে শুরু
আড়ালেতে নীল অভিমান…।

আকাশে আকাশ হলো ঘর
 দুজনেই সীমাহীন পাখি
পেরোলাম বেড়াজাল খুব
শরীরে শরীর মাখামাখি!

            প্রেম-২ 

পথ ছিল সব চেনা
হঠাৎই তা এলোমেলো,
কী এমন জাদুচোখ তার!
বুকে এক ইস্ চমকানো।

এখন তো বর্ষার দিন–
ভিজে গেলে দেবী দেবী লাগে।
পিঠে তার রামধনু ছায়া
গাছে গাছে মল্লার বাজে।

জানি তার চঞ্চল ডানা
কী বা দোষ দিই বলো তাকে?
সে আমার সঞ্চিত মেঘ–
পলকে পলকে বেঁধে রাখে।।


             প্রেম-৫ 

এই তো দ্যাখো ঝরছে পত্রগুচ্ছ
এই তো হাওয়া উড়িয়ে গেল চুল,
এরপর কী চুপ থাকা যায় প্রিয়
পরিয়ে দিলাম কণকচাঁপা ফুল।

এমন সময় ঠোঁট উশখুশ করে
বুকের ভেতর আনচান করে গান,
তোমার জন্য একতারা নিই হাতে
এখন আমি বাউল শাজাহান। 
                    
                প্রেম-৬                                        

                                                    


পরনে তার বিরহ রঙের শাড়ি               
গোপন হাওয়া শীতের কাজুবনে,
একলা বাউল সাধছে সন্ধ্যাতারা
মনখারাপের সুবাস ক্ষণে ক্ষণে।

পাতাঝরা দিন এলো যে কাছে
একলা সাঁকো ডাকছে বুঝি তাই,
শ্যামের বাঁশি হারিয়ে গেছে বনে
কুঞ্জপথে ঘুঙুর খোঁজে রাই।

                 

           প্রেম-৭

চোখে কাজল দিও না রাই–
আমার শীতকাল মনে পড়ে।।

আজন্মকাল কাঁপে যারা
বিষণ্ণ কথাজীবন–
ঝোপঝাড় ডিঙোতে ডিঙোতে 
তারা লতা হয়ে যায়।

ঘুনধরা আড়বাঁশি যে পথ–
 ডেকে চলে অন্তহীন,
সে পথে তুমি নেই। 
আরোগ্য বিকেল নেই। 
নেই অনন্তের গান…

চোখে কাজল দিও না রাই
আমার শীতকাল মনে পড়ে।।

          প্রেম-৮ 

জ্যৈষ্ঠের দোষ নেই কোনও
ছেলেটি নিজেই হলুদ ঘাস।
মৃদু হাওয়া ঝড় মনে হয়–
উপচে ওঠে অন্ধ পরবাস।

পরবাসে কী পাও ছেলে?
বৃষ্টি পড়ে না কি ঝরে ফুল!
বান ডাকে…   প্রেম ওড়ে
জাহাজ ভাসে, ছেঁড়া মাস্তুল…

ঝিমধরা দিন যায় চুপ
রাতগুলি জেগে থাকে চোখে।
অলিতে গলিতে দুঃখযাপন–
মধুমাস কোথা পায় লোকে!

ছেলেটির প্রশ্ন অনেক–
খোঁজে সেই মেয়েটির মুখ,
যেখানে আঁকা কবিতা আকাশ
গান আর রাতের অসুখ।                

                                     

             বাগান

জানি একদিন পুড়ে যাবে সমস্ত অপেক্ষা সঞ্চয়।
ঝরে যাওয়া পাপড়িও বোঝে নিপুণ ভ্রমর ইশারা;
আঁধার দিয়েছ বলে
                  গোপনে রক্ষিত চুম্বন সৌরভ।

বসন্ত এলে সাজাব সম্মতি আকাশ…
বিরহী বাগান জুড়ে অসহনীয় মৌমাছি গুনগুন…
অভিমান লুঠ করে তুলে ধরো–

                       ওই সুদূর অধর…

               অভিসার

ভ্রমর…
সর্ষেফুল হয়ে অপেক্ষায় আছি,

হলুদ হারানোর আগে
ছুঁয়ে ছুঁয়ে দাও–
            তোমার ও কৃষ্ণচরণ…
         

              উৎসব

কেন ছুঁয়ে দিলে আহত হৃদডানা?

শুশ্রুষায় সেজে উঠছে পালক…

এরপর যদি উড়ান-ইচ্ছা জাগে–

          কতপথ ইশারা জোগাবে তুমি!
             

                সংসার


হাত বাড়িয়েছি
আরও একটু কাছে এসো;

হলুদ দিয়েছো।
দেখো তো নুন ঠিক দিলাম কি না

নৈবেদ্য নিয়ে কী হবে?
যত্ন দাও
প্রবাহ রাখি…

এই তো…  এই তো,
সুগন্ধ লেগে যাচ্ছে ঘরে…!

                কলঙ্ক

সমুদ্রে গিয়েছিলাম।

চরাচর জুড়ে দুধসাদা জলরাশিকে
জ্যোৎস্না ভেবে,
চাঁদ খুঁজেছি চাঁদ…।

ঢেউয়ে যারা বেদনা ভাসাতে যায়–
কী নিয়ে ফেরে হে বালুর দেশ?

কৃষ্ণবর্ণে ফিরে এলাম রাধে
কলঙ্ক খুঁজলে না যে!

                                  ★★★

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *