কবিতাগুচ্ছ
ঊষা মুর্মু-র কবিতাগুচ্ছ __
ত্রয়ী
সব স্বপ্ন যখন মাটি হয়ে যায়
তখন মাটি নিছক মাটিই
সুখ হয় হােমাপাখি।
মানুষ শেষতম বিশ্বাস যেদিন হারায়
তারপর সব কিছুতেই অবিশ্বাস
এমনি এসে সে ভেসে যায়।
কাঁদতে কাঁদতে দুটো চোখ যখন দৃষ্টি হারায়
তারপর দিব্যচক্ষু
পৃথিবী-নেপচুন আপন-পর সব একাকার।
শিকড়
বনের বীর্যের তীক্ষ্মতা গেঁথে গেছে কোন ইতিহাসে শিকড়ে শিকড়ে গােপন কানাকানি
ফাঁস হয় রসস্থ মহিমায়
ডানহাত পুড়ে চলে পূজার অপূর্ব স্নিগ্ধতায়
তারপর চুপচাপ
হৃৎপিণ্ডে শিকড় গেড়েছে বট
ঝুরি হয়ে নেমে যায় মন অতল খাদে
হরপ্পা সভ্যতার স্নানঘর পেরিয়ে
একটি নারকেল গাছ,
চিরনি পাতার মাঝে আটকে গেছে চাঁদ!
গর্ভ
আমার গর্ভ থেকে যেদিন।
মাটি জন্ম নিল
সে দিন সূর্য ছিল না।
না চাঁদ না তারা।
একা আমি মা!
মেয়ে মাটি যখন গর্ভবতী
সূর্য উঠেছিল
চাঁদ, তারা।
মাটি মা এখন
মেঠোপথ সকলের
পিতার পরিচয় জানতে চেয়ােনা
আমি—মাটি—দুই মা
এখন দুই বােন।।
অঘােরীর চোখ
অন্ধকার যখন ঢুকে পড়ে ঘরে।
দ্বারপালেরা এসে দাঁড়ায় দুয়ারে।
শরীর মন বড়ই দুর্বহ
শিশির পড়ে বাইরে ভেতরে
ভিজে যাওয়া বর্শায়
চাঁদের গ্রহণ লাগা আলাে
পর্দাকে শিখণ্ডি মেনে শান্তির কথা বলি
বদলে ঘুমের ভেতর আসে শাণিত চক্ষু অঘােরীর চিতা নিভে যাওয়া সােল্লাসে
রক্তের কুসুম তবু সবুজে নিয়ে যাব তােকে।
পাঞ্চালী
সম্পর্ক থেকে সম্পর্কে পরিক্রমা
অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের চোখেও বিবসনা আমি
ফাল্গুনি, কত দূর দিয়ে যাবে এ শরীর
স্থূলতায় চেয়েছো কাছে কাছে
পড়ে গেছি আমি হিমালয় পাদদেশে
যাও যুধিষ্ঠির স্বশরীরে দেখে এসো স্বর্গ
আকু পাকু
খোকা কাঁদে
ভালোবাসা– পাখি ডাকে
ভীম ফেলে গেছে গদা আমার পরেই।
মুখোস
আমরা কেউ কারুর মুখ দেখছি না
মননে শুধু বিষ
একবার মুখ খুললেই…
তবু কেউ কাউকে ছেড়ে যাচ্ছি না
পায়ের তলায় চোরাবালি
ধৈর্য্য হারাচ্ছি, ভালোবাসা ধর্ম
ঐ সোনালী মাছ অনবরত পাক খাচ্ছে
হেসে গড়িয়ে পড়ছি…
আর ভাবাচ্ছি অপূর্ব খেলা।
★★★