পর্ব-২৫; শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী — মেদিনীপুরের ভুলে যাওয়া ইতিকথা

পর্ব-২৫

শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী-
চন্দ্রকোনার হারিয়ে যাওয়া ছোট ছোট ইতিহাস নিয়ে                           
           মেদিনীপুরের ভুলে যাওয়া ইতিকথা

                                                                                           ছবিঃ গৌতম মাহাতো

                                পর্ব-২৫

শ্রীমন্মহাপ্রভুর পদধূলিধন্য
                      চন্দ্রকোণা।
              শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী
                           
ঝাঁকরাগ্রামে প্রবাদ আছে যে, “তিনি এই স্থলের দীঘির ঘাটে সশিষ্যে চিড়া দধি ভোজন করেন। “
লেখক অনুসন্ধান করিয়া দেখিয়ে যে প্রাচীন মায়াপুর অঞ্চলের পূরাতন ঘাটের ইট,ঝাঁকরা দীঘির ঘাটের ইট, মেদিনীপুরের পুরাতন ইমারতের
 ইট এবং শ্রী ক্ষেত্র ও গয়া  ধামের অনেক পুরাতন
অট্টালিকার ইট একই গড়নের। এইগুলি সমসাময়িক সভ্যতার নিদর্শন। ভক্ত রঘুনাথকে
যাহাতে কেহ ধরিতে না পারেন তদন্ত তিনি শিলাবতী নদীর সরান ঘাটের দিকের পথ পরিত্যাগ
করিয়া তারাজুলি খাল হইতে (রামজীবনপুরের উপর দিয়া) ছত্রভোগ অর্থাৎ ছত্রগঞ্জ ও কুঁয়াপুর
গ্রামের মধ্য দিয়া কোঁয়াই গ্রামে পুর্ব্বোক্ত পথকে ধরেন। কোগ্রাম কুঁয়াপুর বা কোঁয়াই হবে।
পরবর্তী কালে তজ্জন্যই মনে হয় বসনছোড়া
(ছত্রগঞ্জ) গ্রামে শ্রীমন্নিত্যানন্দ পৌত্র গোপী
বল্লভ কর্তৃক আউলিয়া শ্রীপাট স্থাপন  করায় হয়েছিল এই সুবিখ্যাত মন্দিরটি প্রস্তরের তৈয়ার
জোড় বাংলা।
বৈকুণ্ঠপুর গ্রামে রহিয়াছে, “শ্রী শ্রীগোপী মোহনের
পাট”। দাক্ষিণাত্য যজ্ঞপুরে সুদর্শন  নামে একজন
বেদবিদ্ ধর্ম্মপরায়ন ব্রাম্ভণ ছিলেন। তাঁহার পুত্রের
নাম হইল শ্রী শ্রীশঙ্করারণ্য প্রভু, ইনি মাটি পুর্ণিমা
তিথি উপলক্ষ্যে জন্মগ্রহণ করেন এবং গৌরাঙ্গ দেবের পর্ষদ ও বক্রেশ্বর প্রভুর শিষ্য ছিলেন। উক্ত
শঙ্করারণ্য প্রভুর  পুত্র মাধবাচার্য্য, তাঁহার পুত্র
শ্রী শ্রীহরিদেবাচার্য্য প্রভু বঙ্গদেশে ভক্তিবাদ প্রচারের জন্য শুভাগমন করেন। চন্দ্রকোণার চৌহান রাজবংশের রানী ঠাকুরানি দেবী তাঁহার
নিকট দীক্ষিত হইয়াছিলেন।
৺হরি দেবাচার্য্য প্রভু পিতামহের প্রতিষ্ঠিত ৺গোপী
মোহন বিগ্রহকে সঙ্গে আনয়ন করিয়াছিলেন।
ভক্তিমতী ঠাকুরানি দেবীও গোপীমোহন কে একটি
পঞ্চরত্ন শ্রীমন্দির দান করিয়াছিলেন।

গোপীমোহন জীউ
          চন্দ্রকোণা থানা অন্তর্গত ৩ নম্বর 
           অঞ্চল পঞ্চায়েতের অধীন বৈকুণ্ঠপুর                                                                                                         গ্রামের “শ্রী শ্রী গোপীমোহনের শ্রী পাট”
                   

বাবু গোস্বামীদের আদি কথা করি সঙ্কীর্ওন।
শুনহ ভাগবত যত, প্রিয় শিষ্যগণ।।
(দাক্ষিণাত্য) যজ্ঞপুরে সুদর্শন নামে ব্রাম্ভণ ছিলা;
তৎপুত্র শঙ্করারণ্য মাঘী পূর্ণিমায় জন্ম লৈলা।।
গৌরাঙ্গ  দেবের পার্ষদ ইনি বিস্তারিয়া যাই।
বক্রেশ্বর প্রভুর শিষ্য জানাই সবার ঠাই।।
তৎপুত্র মাধবাচার্য্যের পুত্র হরিদেবাচার্য্য।
বঙ্গদেশে ভক্তিবাদ প্রচারে আইলা আচার্য্য।।
চন্দ্রকোণার চৌহানের পত্নী ঠাকুরানী দেবী।
দানিলা বৈকুণ্ঠপুর, দরিচক আর কুমারডুবি।।
শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন সেই মহারানী।
সতী, স্বাধী, ভক্তিমতী আর্যরমনী।।
বৈকুণ্ঠপুরে ‘ঠাকুরানী পুস্করিনী’ প্রতিষ্ঠিলা।
শ্রী বিগ্রহের নিমিত্ত মন্দির দানিলা।।
হরিদেবাচার্য্য সঙ্গে আনেন গোপীমোহনে।
পিতামহের প্রতিষ্ঠিত রাধিকারমণে।।
আজো যদি করেন কেহ শ্রীমূর্ত্তি দর্শন।
মন্দিরেতে দেখিবা সেই গোপীমোহন।।
হরিদেবাচার্য্যের তিন পুত্র করহ শ্রবণ।
পিতাম্বর, গৌরাঙ্গ আর মথুরা মোহন।।
পিতাম্বরের ব্্শ আছেন বৈকুণ্ঠপুরে।
গৌরাঙ্গের ব্্শ রহে গোপীমোহনপুরে।।
দাশপুরেতে আছেন আজো মথুরামোহনের ব্্শ।
এইরূপে বিস্তার হৈল শঙ্করারণ্যের অংশ।।
বৈকুণ্ঠপুরে হয় শঙ্করারণ্যের জন্ম মহোৎসব।
গোপীমোহনপুরেতে তিরোভাব উৎসব।।
দাশপুরেতে হয় জানি স্মরণ মহোৎসব।
শ্রী পাট মত বন্টন হৈল সর্ব্বোৎসব।।
হরিদেবাচার্য্যের প্রপৌত্র জগদানন্দ গোস্বামী।
অনিমা লঘিমা সিদ্ধ বিরাট তত্ত্বজ্ঞানী।।
ব্যাঘ্র পৃষ্টে গমন করিলা মালীয়াড়াতে।
তেওয়ারী ব্্শে গুরুদেব ইষ্ট মন্ত্র দিতে।
বহু জ্ঞানী, মানী, সঙ্গীতজ্ঞ ছিলা শ্রী পাটে।
উৎসবাদি শুদ্ধ মত হয় আজো পাটে।।
গোস্বামীদের ইতিকথা অমৃত সমান।
যে জন শ্রবণ করে সেই পুণ্যবান।।


চন্দ্রকোণা                                  ইতি
শুভ ঝুলন পূর্ণিমা          শ্রী কৃষ্ণ পদারবিন্দ ভিক্ষু-          ১৩৭০ সাল                 শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী
                                  (রচয়িতা ও প্রকাশক)

                                                         ক্রমশ…

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *