বিমল মণ্ডল- এর দুটি অণুগল্প

অণুগল্প

বিমল মণ্ডল– এর দুটি অণুগল্প

                                                       

মূলত কবি হলেও অণুগল্পে তাঁর অবাধ গতায়াত।বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে দীর্ঘদিন ধরে লিখে চলেছেন।

                         হাসপাতাল থেকে

অন্নদার সংসার বলতে একটা  ছেলে, কয়েকটি  ছাগল আর কিছু ফুল ও ফলের গাছ।
অন্নদা  মাঝে  মাঝে  দু’এক ঘরে তোলা কাজ করে। ছেলেটা এই ভাবে বি.এ পাশ করেছে। 
ছেলেটাকে সবাই ডাকে ছোট্টু বলে। তবে  তার ভালো  নাম সুমন অর্থাৎ  সুমন দত্ত। বাবা যখন  মারা যায় তখন  তার বয়স  ছিলো  চার কিংবা  পাঁচ  বছরের। তবে থেকেই অন্নদা  ছেলেকে নিয়ে দিনরাত স্বপ্ন  দেখেছে । 

একদিন চাকরির  সুবাদে সুমন কলকাতায়  ইন্টারভিউ  দিতে  গেলে অন্নদা  হঠাৎ  অসুস্থ  হয়ে পড়ে।পাড়ার কয়েকজন  মিলে অন্নদাকে হাসপাতালে  ভর্তি  করিয়ে দেন। 
ছেলেকে ফোন করতে অন্নদা  বারণ করে দেয়। 
কিন্তু  এদিকে  অন্নদার কাশির  সাথে মুখদিয়ে প্রচুর  রক্ত বেরোতে  থাকে। ডাক্তার   শেষ  জবাবও দিয়ে  যায়। 

সুমন যখন রাতে বাড়ি ফেরে। বাড়িময় যেন এক নৈঃশব্দ্য বিরাজ করছে। সুমনের  চোখে মুখে একটা  আনন্দ ভেসে উঠেছে । কারণ  প্রথম  চাকরির  খবর টা সে প্রথমেই মা’কে দিতে চায়। মায়ের দুঃখ, অভাব সে ভাগ করে নিতে চায়। 

হঠাৎ  হাসপাতাল  থেকে খবর  আসে অন্নদার মৃত দেহ আনতে  হবে। 
মুহূর্তে  সুমনের  শরীর কেঁপে ওঠে , নিশ্চুপ  হয়ে হাতের কাগজগুলো ছিঁড়ে  টুকরো  টুকরো  করে উন্মাদ  পাগলের  মতো হাসতে হাসতে  আকাশের  দিকে উড়িয়ে  দেয়।

                                  ★★★

                          লবি

রাতে লেখালেখি  করে সবে মাত্র  বিছানায়  উঠছি 
তখন  অজানা  নং থেকে একটা  ফোন এলো –
-আমি মাইতি বাবু বলছি
-হ্যালো কে বলছেন?
-অমিত মাইতি
কিছুক্ষণ  চুপচাপ  থেকে বললাম  –
–  হ্যাঁ  দাদা বলুন ? 
আসলে অমিত বাবু একটা  পত্রিকার  সম্পাদক । ভালো নামডাক  আছে। 
এককথায়  সাহিত্যের অনুরাগী  বলা যায়। 
তিনি ফোন করেছেন  আমাকে সত্যিই ভাবতে অবাক  লাগছে আবার আনন্দও হচ্ছে। 
তাই একটু সাহসের সহিত  বললাম –
-কেমন আছেন?
-আছি মোটামুটি । এবার কাজের কথা বলি?
 -হ্যাঁ  হ্যাঁ বলুন
ঊনি গড়গড় করে পত্রিকার  কিছু  কাজের কথা বলে গেলেন। আমি মোটামুটি  বুঝলাম  যে ঊনি ঊনার পত্রিকার  কাজের দায়িত্ব  দিতে চায়। আমিও  সাতপাঁচ না ভেবে কথা  দিয়ে দিলাম। 
বুঝলাম  না ভবিষ্যৎ  কি হতে পারে। 
একটা  টানও অমিত বাবু ও তাঁর  পত্রিকার  প্রতি টেনে  নিয়ে গেল। আমাকে সহসম্পাদক রেখে  আর ঊনি সম্পাদক  হিসেবে  আমাকে বেশ খাটাতে শুরু  করলেন। 
যত নাম, ডাক  অমিত বাবুর । আমি শুধু  কাজ করে যাই। তবুও  ঊনার থেকে বেরিয়ে  আসতে পারি না। 
লোকটার প্রতি একটা  টানও কাজ করে। 

একদিন  বিরাট  সাহিত্যানুষ্ঠানের আয়োজন অমিত  বাবু করেছেন  আমাকে অন্ধকারে  রেখে। 
পরের দিন আনন্দবাজার পত্রিকায়  খবরটা  দেখে চমকে উঠলাম । সেখানে  সব কৃতিত্ব অমিত বাবুরই। যাঁরা  এসে ছিলেন  সবই ঊনার লবির লোক। 

আমি অযাথা বিরক্ত  করলাম না। বুঝতে পারলাম  আমাকে শুধু  ব্যবহার  করেছেন । 

হঠাৎ  সন্ধ্যায় একটা  ফোন আসে। অমিত বাবুর পরিবার  জানান যে অমিত বাবু খুব অসুস্থ। আমাকে দেখতে চাইছে । 
মনে মনে লোকটার প্রতি রাগ হলো ঠিকই  কিন্তু  এই বিপদের সময় ছুটে  গেলাম । ডাক্তার  জানান- ০–(নেগেটিভ ) রক্ত কয়েক  সেকেন্ডের মধ্যে  দরকার  না হলে বাঁচানো  যাবে না। 
ঊনার লবির  একটাও লোক এই বিপদের সময় নেই। পাশে ঊনার পরিবার  কাঁদছেন । 
ভেতরে গেলাম । 

– অমিত বাবু সুস্থ  হয়ে পরিবারের পাশে বসে। 
– ডাক্তার বাবু  হাসি মুখে এসে বলেন-
-এ যাত্রায় আপনি  বেঁচে  গেলেন। 
আমাকে দেখিয়ে বলেন যে-ঊনার লবিতে  আপনি  শেষ যাত্রা  থেকে ফিরে এলেন।

অমিতবাবু আমাকে জড়িয়ে  ধরে আর বলেন-
-তোমার লবির কাছে আমি পরাস্ত…

                                      ★★★

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *