শ্যামল সরকার-এর কবিতাগুচ্ছ

 কবিতাগুচ্ছ

শ্যামল সরকার-এর কবিতাগুচ্ছ

                                                           

মাননীয় মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের  সচিবালয়ের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক থেকেও কবিতার প্রতি তাঁর টান রয়ে গেছে সেই স্কুলের পড়াশোনার সময় থেকেই । কবি শ্যামল সরকার সমাজের অবক্ষয় এবং বৈষম্য নিয়ে সোচ্চার।মূলত কবি তবে ক্বচিৎ কখনও গদ্যের প্রতিও তাঁর দুর্বলতা।বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে তাঁর অনায়াস নিরীক্ষা।আর এই নিরীক্ষার জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন কবিতাকেই।

ত্রুটিহীন আমন্ত্রণে

পৃথিবীর এই চলা ফেরা আমাদের বাঁচিয়ে রাখে 
গণগণে  চিতা  হাঁ  করে  তাকিয়ে  আছে, আতিথেয়তার  ত্রুটি হীন  আমন্ত্রণে. 
বাস্তব  তুমি  বাস্তব —-যুগে  যুগে  কালে  কালে. 
আজ  না  হয়  কাল, জ্বলন্ত
চুল্লীর  গনগনে আঁচে, বিলীন  হবো  মহাকাশে, সময়ের  অঙ্কে  বাহান্ন  মিনিটে.
 তবু জীবনের সব কিছু হিসাব বড়ো দামী হয়ে ওঠে

স্বপ্নের অধিকার

সবাই  আমরা  স্বপ্ন  দেখি 
স্বপ্ন  দেখার  অধিকার, গণতান্ত্রিক 
বাস্তবের  শৃঙ্খলে  বন্দি ,স্বপ্নের  স্তর 
তাইতো 
গফুর  চাচা  স্বপ্ন  দেখেনা  ছেলেকে  বিলেত  পাঠাবার 
গায়ে গতরে  বেড়ে  ওঠার  আগেই  রোজিনাকে  পাত্রস্ত  করতে  হবে –বিষাক্ত নজর এড়াতে 
বাস্তবের স্বপ্নে ঝাপসা ,
গ্লোসাইনবোর্ডে  টাঙানো  সরকারি  বিজ্ঞাপন 
রোজিনার  স্বপ্ন  বাস্তবকে  মেনে  নেওয়া ,ক্ষেতি  করতে  যাবার  আগে  বাপ ,ভাইয়ের  হাতে  পান্তার  কৌটো  তুলে  দেওয়া 
গফুর  চাচার  বিবি স্বপ্নে  শুনতে  পায়  কানে  কানে  বলা  ফজলের   স্বপ্নকথা ,তাড়াতাড়ি  তাগড়া   হবার ,বাবার  সাথে  জনমজুরি  করার ..
স্বপ্নের  আবেশে  মা  বলে  ওঠে লেখাপড়ার  স্বপ্ন  দেখিস  না ?
স্বপ্ন  দেখার  অধিকার  হরণ  করেছে  মাগো ,
এ  জঠর  জ্বালা 

 ধর্মের  পুণ্যস্নান 

পুণ্যির  জলে আত্মা  ভেজাতে ,মক্কা  থেকে  জেড্ডা  .উড়ান বাতিল, হৈচৈ 
মাভৈ মাভৈ,
ধর্মের  ভয়ে ,মানবিকতার  দায়ে ,
ত্রাহি ত্রাহি  রব .
আগুন  লেগেছে  আমাজনে
 আন্দাজ  বলে ,পুনর্বাসন চাইছে –
        সুন্দরবন !
লিঙ্গ  চিনে জোতিষীরা ভবিষ্যৎ  গোনে .
গুনিন  সেজেছো ?            
          চমৎকার !
রক্তের  রঙে  লাল  সাদা  নীল ,

 দরদি  গরীব !     
জেনেও  না  জানার  ভান –স্যানিটারি  তির ,
মাথাতে  ন্যাপকিন .শাহীনবাগ   ফাঁকা 
দিল্লীর  রাজপথ ,
ভয়েতে    ভিড় .
দেখবে  কেমন  করে ?
মাস্কএ  মুখ  ঢাকা .
ধীরে  একটু  ধীরে ,চালাও গোলা
ওগো  বীর ,অনুন্নত
মম শির  

 ইকোলজিক্যাল ব্যালান্স 

দুঃখের  মহাউল্লাসে ,ঝর ঝরিয়ে  কলম  কাঁদে .
মেদ বৃদ্ধি 
বুদ্ধির  লেয়ার এ ,লিপিডএর  আস্তরণ .
          ..সৌজন্যে —
চীন  থেকে  আগত ,
সারা  বিশ্বে  স্বাগত ,
“জন গণ  মঙ্গল -ভারত ভাগ্য  বিধাতা “
ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ এ ,
           সক্রিয় ,
     ইকোলজিক্যাল    
          ব্যালান্স 

মূল্য বোধের  মানে 

নীলাদ্রি তুমি  এখন  কোথায় ।  আমি  জানিনা আজ  বিশ  বছর  পরও  তোমার  অভাব  অনুভব  করি ,ফেলে  আসা  স্মৃতি  রোমন্থন  করে অবসর  কাটাই ।
কর্পোরেট  অফিসের ব্যাস্ততার ভিড়ে  হারিয়েছে  স্মৃতি । আজও  ভাস্বর তোমার  ভালোবাসার  সহানুভূতি,অকৃপণ দানে  মাধ্যমিক পাশের ছাড়পত্র। কাঁচের ফ্রেমে  বন্দি ,মাদুলি  হয়ে  শোভা পানবিড়ির  গুমটিতে ।
টিফিন  ভাগ  করে  খাওয়ায়  অপরাধে পিঠের  পাঁচ  আঙুলের  ছাপ আজও  কষাঘাত  করে  ।স্বীকার  না  করা  সত্য  প্রকাশ পায়  অনির্বানের সরল  স্বীকারোক্তিতে । স্কুলের ক্রিকেট  ফাইনাল  ম্যাচে নিজের  অজান্তেই  ফুটে  ওঠা  উপবাসের  চিহ্ন অনুভব  করেছিলে  হৃদয়  দিয়ে । চটজলদি  শক্তি  জোগানের অছিলায় অনশন  ভাঙানো ডিম  কলা  খাইয়ে দিদির  চাকরির  পরীক্ষার  খরচ  জোগানে  সে  অনশন  ছিল  বাধ্যতামূলক ।
আজ  ভরপুর  সংসারি বাড়তি কিছুর  আশায়
পান বিড়ির  সাথে পণ্য  কিছু  করি  ফেরি .
নির্জন  রাতের  গভীরতায় পণ্য হয়ে ওঠে  দরকারি।
হাজার  চেষ্টা  করেও  উদ্ধার  করতে  পারি  না –ছেলের  ইংরেজি  খাতায় লেখা  “ভ্যালুজ  অফ  মোরালিটির ” অর্থ যদি  কোনো  দিন  দেখা  হয় —জেনে  নেবো  তোমার  কাছে ,
   মূল্য বোধের  মানে ।

 একমুঠো  ভালবাসা

       ভ্যানিশ  হচ্ছে  ভেনিস কর্পূর              ভালোবাসা,
 স্বাস্থমন্ত্রকের প্রটোকলে
চিতাভস্মরা  দিশেহারা
ফুলে  ফুলে  ঘুরে  ফেরা –প্রজাপতি  মনমরা
                     আগ্নেয়গিরির  অগ্ন্যুৎপাতে, ফুটন্ত  লাভার  বিজয়  উল্লাসে—ম্রিয়মান প্রাণবন্ত  জীবনস্রোত  
বাঁকা  চোরা  পথে  আশ্রয়  খোঁজে
            স্পর্শ হীন  ভালোবাসা –চেয়ে  দেখে  মহাকাশ, শূন্যতার করুণ  সুরে.. 
প্রেম প্রীতি  ভালোবাসা –ভেসে  চলে  অজানার  পথে, কান্নার  ভেলা  চেপে
   নদী  আছে  স্রোত  নেই ,   ফুল  আছে  ভ্রমর  নেই    ,    চোরাবালির  গোলক  ধাঁধায়  বন্দি  মুসাফির , ভিখ মাগে  হিমালয়, একমুঠো  ভালোবাসা.



 ইতিহাস   


  ঘুমের  আবেশে  স্বপ্নের  ঘোরে, চুরি  যাচ্ছে  অক্ষর গুলো
               পর  পর  অক্ষরের  সুশৃক্ষল  বিক্ষোভে -শব্দ মালার প্রদর্শন
           চারু, কলা ,শিল্প, প্রবন্ধ, kobita, শ্লীল, অশ্লীল, কান্না  হতাশা , ভালোবাসার  মিছিল
      দেশ  থেকে  দেশান্তরে, আছড়ে  পড়ছে আন্দোলনের  ঢেউ
 ব্যারিকেড  আর  জলকামান  একপায়ে  দাঁড়িয়ে.                      চৈত্র শেষে  কৃষ্ণচূড়ার মুখ  ভার, কদর  বেড়েছে  মহুয়ার. চারিদিক  নিঃস্তব্দ  নিথর..                          নাৎসিদের বর্বর  আক্রমণে —-চুরমার  মানবিকতা. দ্বিতীয়  বিশ্বযুদ্ধ?  সে  তো  অনেক  আগের  কথা.             পিতৃঋণ  শোধে  ঘটছে  নির্মম  পরিহাস !            হারিয়েও  না  হারাও, তাই  তুমি  ইতিহাস..

 স্থূল কবিতা

 
মৃত্যু  দুয়ারে  দাঁড়িয়ে, তবুও  নির্বিকার?       
   সারা  রাজ্য  দাপিয়ে  বেড়াও, এ  তোমার  অধিকার?                    আইন  ভাঙার  গর্ববোধে বলতে  থাকো, 
ক্ষমতা  কার  আমায়  রোধে?              ছুটছি  আমি  হাঁকিয়ে  গাড়ি, বহুদূরে  আমার  বাড়ি. শহর  জুড়েই  গাড়ির  সারি
বাবু  মশাই  পড়লে  ধরা           মুখে  বলেন  স্যরি   স্যরি .. 
চোখের  ইশারায়  টাঙ্কি  মারে, চল  এবার  কেটে  পরি..                  দাদার চেলা  দাঁত  কেলিয়ে  মুখ  বেঁকিয়ে –আউড়ে  চলে —আবে, হয়েছে  টা কি?      মানুষ  নিয়ে  টানাটানি?            হচ্ছে  টা  কি? ইয়ার্কি?.     আটক  করে  পুড়লে  গারদ, হাজির  হয় দাদার  নারদ. তোদের  এতো  দুঃসাহস?             অহং  বোধের  হুঙ্কারে, খিস্তির  ফোয়ারা  ছোটে  নির্বিচারে
                    বিজয়  হাসি  হেসে ষণ্ড     বলতে  থাকে                             আমায়  দেবে  ওরা  দন্ড !                             রাজ্য  জুড়েই  রাজ ভন্ড..

 রিমেক  কবিতা

কলমচিদের আক্রমণে দিশেহারা  ভাইরাস.
দেশ  থেকে  উৎখাতে ,
500কোটির  ইনাম ,
ঘোষণা  করেছে সাইরাস .
কল্পনার  তীব্র  রোষে ,
সুগন্ধী  জুতো  পেটা ,
এতদিনে  জব্দ  হয়েছে ব্যাটা .
বহু ভালোবেসে আদরে  যতনে গিন্নির  মুখে ,সুরভি-জর্দার  গন্ধ ,
চারিদিক  থেকে সাঁড়াশি  আক্রমণে ,বুজরুকি হয়েছে  বন্ধ .
আবেগে আবেশে তীব্র  জনরোষে —
সর্বনা ,সাবিনা ,সুজান ,জামাল ,কামাল
যুদ্ধে নেমেছে  ভাইরাস  বধে –ওরা  প্রতিজ্ঞাবদ্ধ .সূর্যের  প্রখর  তাপে ,
হরেক  তত্ত্ব হয়েছে  খাড়া ,অনাহার  অবহেলে  হবি  তুই  দেশছাড়া .
সাবিনার  সুরে সু-উচ্চ  স্বরে ,রক্ত  ঝরাতে পারি   তো আমরা ,
কলমের  জোরে ..
অঙ্গীকার  বদ্ধ  আজি –.যতক্ষণ  দেহে  আছে  প্রাণ ,লিখে  যাবো  রক্তলেখা .
এ  মারণ  মন্ত্র —-
জিরো বাউন্ডারির গুরুর থেকে শেখা

 স্বপ্নের  মৃত্যু

       
পঙ্গুত্বের  ডানা  ঝাপটানো  ফিনিক্স  পাখিটা, সাইবেরিয়া  থেকে  সোজা  চুপির  বিলে. 
চুপচাপ  ফিসফাস 
কথা  কয়  ইশারায়, 
বায়ু ভরা  ফুসফুস, 
চুপসে  নিঃশ্চুপ. 
শালুক  ফুলের  তলে, 
চুপচাপ  বকেরা. 
মিশরের  নীলনদ –
আরো  কাছে, বহু  দূরে 
মিসিসিপির জল  নড়ে, 
পাতা  খসে  টুপ্ টাপ. 
  প্রতিঘাতে ছটফট 
তছরুপ, তছনছ. 
ঘুম  ভাঙা  চোখে  দেখি 
— বৌ  বলে 
এখনও কি স্বপ্নের ছায়ার তলে
কত কী যে দেখো সকালে

 এবং  তারপর…. 

 এবং তারপর   শুরু  অবক্ষয়
শৈশব কে  হেলায়  হারিয়ে কৈশোরে  পদার্পন,
 তুড়ি  মেরে  কৈশোর কে উড়িয়ে যৌবনের  ফাঁদে  পা
মদমত্ত মাতাল  হাতি, সব কিছুকে  গুড়িয়ে  ফেলার  বৃথা  আস্ফালন
বেকারত্বের  জ্বালায়  দিশেহারা 
 ক্ষিদে, কর্তব্য এর  হাতছানি,
 সমাজ  গড়ার  প্রবল ইচ্ছে, 
ব্যর্থতার হতাশায়, চাপা  কান্নার  হাহাকার
ব্যর্থতার  ছাপ  স্পষ্ট, অপদার্থ  তকমায় ক্ষত বিক্ষত  দেহ মন,
 সাফল্যের  তুলনামূলক  রিলে রেসে ক্রমশঃ  পিছিয়ে  পড়া. 
মধুমেহর পরম  স্পর্শে –ঝুলে  পড়া  চিবুক, হারিয়ে  ফেলা  দীপ্ত  যৌবনের  লজ্জায়, আয়নার  মুখোমুখি  হতে  বিমুখ
কালের  অমোঘ  নিয়ম কে  সায় না দেওয়া  মন —-দ্বন্দ্ব মূলক  বস্তু বাদ  কে  অস্বীকার  করে  বার্ধক্য এর  সাথে  শ্রেণী  সংগ্রামে  লিপ্ত হবার  দীপ্ত  ঘোষণা. 
 –মেনে  নাও  কালের  নিয়ম.. 
সমাজ তান্ত্রিক  সমাজ  কল্পনায়, সাম্য বাদ  প্রিতিষ্ঠিত  করার  লড়াই শুরু  হয়েছিল কৃষক  শ্রেণীর  সংগ্রামের  মধ্য  দিয়ে 
 মার্ক্সকে  ভুল  প্রমান  করে

                                ★★★
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *