ছবিঃ গৌতম মাহাতো
উত্থানপদ বিজলী-র ছড়াগুচ্ছ
ছড়াকার হিসেবে এই নামটুকুই যথেষ্ট।দীর্ঘদিনের যাপন তাঁর উঠে আসে ছন্দের হাত ধরে।মূলত লিটল ম্যাগাজিনেই মুক্তি কিন্তু লিখেছেন বহু বানিজ্যিক পত্রিকায়।তাঁর ছড়া ছোট বড় সকলের ভেতর দুলিয়ে দিতে যথেষ্ট।
ছড়ারা ছড়িয়ে আছে
ছড়ারা ছড়িয়ে আছে আমাদের চতুর্দিকে
যে চেনে চিনেছে ঠিক পটাপট নিচ্ছে লিখে।
সে জানে কোথায় আছে ফোটা ফুল পদ্মপুকুর
ঘোরে সে চরকি যেন, মানে না গরম দুপুর।
খোঁজে সে সকালবেলায় শিশিরের ভেজা ঘাসে
চলেছে মেঘের ছানা দূরের ওই নীলাকাশে।
নামে যেই সন্ধ্যাবেলায় করে ঝুপ আঁধাররাশি
ওদিকের ঝোপটি থেকে আসে কোন ফুলের বাসই।
খোঁজে সে ছড়া দেখি আঁধারে বাঁশবাগানে
ডাইনে ঘুরে গিয়ে বাঁ-ধারের ঠাকুরথানে।
সে জানে খুঁজলে পাবে অচেনা কোন সে গাছে
যে জানে,ঠিক সে জানে ছড়ারা ছড়িয়ে আছে।
সকলে জানে না তো কেমনে জানবে বা তাই
তাহলে সহজ হত সহজে লিখত সবাই।
ক’জনে লিখতে জানে ক’জনে পারছে বা তা
ছড়ারই নামে কেবল কী যে ছাই ভরায় খাতা!
এই তো আমার গাঁ
পাখিরা অত যে করে ডাকাডাকি
সকাল হয়েছে বুঝি !
রোদ ঝিলমিল পাতারা নাচছে
ঘুঙুর কোথায় খুঁজি।
নদী কলকল বয়েই চলেছে
সুদূর ডাকছে তারে,
ফুল বাগিচার ফুলকলি সব
খুঁজছে এখন কারে ?
ওই দেখি কারা বাজিয়ে দোতারা
গান করে ঘুরে ঘুরে,
বাতাসের বুকে ঢেউ তুলে নেচে
সুর ভেসে যায় দূরে।
দিগন্তরেখা কুয়াশায় ঢাকা
মধুমাখা হাতছানি,
ভালবাসি সব তাই এতো বুঝি
চারদিকে কানাকানি!
আসতে হবে
পদ্মপাতায় রাতের শিশির ঝরে
দুষ্টু হাওয়া মিষ্টি খেলা করে
মুচকি হেসে সূর্য জ্বালায় বাতি
এদিক ওদিক গড়ায় হিরের ভাতি।
এসব কোথাও দেখতে পাবে না
আসতে হবে তোমায় আমার গাঁ।
গাছের তলায় শিউলি ফুলের রাশ
ঝরল কখন ? ওরে উরিব্বাস!
কাশ ফুটেছে মজা নদীর ধার
মুগ্ধ করে নয়ন সবাকার।
এসব কোথাও দেখতে পাবে না
আসতে হবে তোমায় আমার গাঁ।
সবুজ সবুজ পাতায় ছাওয়া গাছ
হাওয়ার সাথে খুনসুটি আর নাচ
হাজার পাখির কিচির মিচির কথা
রাত্রি এলেই নামে নীরবতা।
এসব কোথাও দেখতে পাবে না
আসতে হবে তোমায় আমার গাঁ।
ইচ্ছে নদী যাচ্ছে দূরে
মৃদুমন্দ বইতে থাকে বাতাস
সকালবেলায় ওঠে সূর্য হেসে
মাথার ওপর স্বপ্ন মাখা আকাশ
ফুলের গন্ধ এলো হঠাৎ ভেসে।
খুশি যেন রঙিন প্রজাপতি
উড়তে থাকে এদিক ওদিক বেশ
মনটা এখন হয়ে ইচ্ছে নদী
তরতরিয়ে যাচ্ছে দূরের দেশ ।
ছেলেটা মজার বটে
ছেলেটার মনের ভেতর কি জানি কী যে আছে
কখনো ছুটতে থাকে কখনো উঠছে গাছে
কখনো থমকে দাঁড়ায় দীঘিটার ঘাটের কাছে।
ছেলেটার মনের ভেতর কি আছে কেউ বুঝি না
কখনো নাচছে দুলে তাতা-থৈ তাকতা-ধিনা
কখনো গুনগুনাচ্ছে মেজাজেই আছে কি না !
কতো কি আছে জমে ছেলেটার গহিন মনে
বসে ওই নদীর ধারে গোনে ঢেউ মনে মনে
আকাশের দিকে চেয়ে ওড়ে সে মেঘের সনে।
ছেলেটা কোথা যে যায় ছেলেটা মজার বটে
কতো সব ছবি যে তার মনেরই চিত্রপটে
ছেলেটার বুদ্ধি বেজায় কতো সব ফন্দি আঁটে।
জল পড়ে টুপটাপ
জল পড়ে টুপটাপ
পাতা নড়ে তাই
জানালায় বসে বসে
দেখছি একাই।
আকাশে মেঘের ঘটা
আলো চমকায়
বাতাসেরা খুশি মনে
কিছু গান গায়।
নেচে নেচে আসে গান
অচেনার সুরে
কত দূরে ছিল যেন
কোন মায়াপুরে।
বইখানা পড়ে আছে
টেবিলের পর
জল পড়ে টুপটাপ
আর ঝরঝর।
আমি ছবি আঁকি না
তোমরা তো ছবি আঁকো
আমি ছবি আঁকি না
কাগজ ও রং-তুলি
হাতে তাই রাখি না।
আকাশের ক্যানভাসে
কত মেঘ ভেসে যায়
চেয়ে চেয়ে শুধু দেখি
মনে খুশি হেসে যায়।
মনে মনে কথা বলি—
আঁকি যদি তোরে আজ
গতিশীল ভাবখানা
ফোটানো দুরূহ কাজ।
তার চেয়ে এই ভালো
রং-তুলি পড়ে থাক
চোখের সামন দিয়ে
মেঘগুলো ভেসে যাক।
কতদূর যাবি তোরা
উড়ে উড়ে কোন দেশ ?
যদি যেতে পারতাম
মজা ভালো হত বেশ।
★★★