আলেক্সান্ডারের সময়ের প্রাচীন বাংলাঃ লিখছেন- দুর্গাশঙ্কর দীর্ঘাঙ্গী

 

                   প্রাচীন বাংলা

      প্রাচীন বাংলা ও আলেকজান্ডারের ভারত       
   আক্রমণকালে বাংলাদেশের ইতিহাসের এক
     গৌরবোজ্জ্বল যুগ, (খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক)

                          লিখছেন- দুর্গাশঙ্কর দীর্ঘাঙ্গী

                                ২০

এটা অনুমান করা যায়, খৃষ্টজন্মের তিনশত বৎসর পূর্বে মহারাজ অশোকের সাম্রাজ্য সমগ্র বঙ্গদেশ
পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বঙ্গোপসাগরের উপকূল ও
তাম্রলিপ্ত তখন বঙ্গদেশের দক্ষিণ সীমা ছিল এবং
সুহ্মদেশ অশোকের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। 
নন্দবংশীয় রাজারা বা অশোকের পিতামহ সম্ভবত: বঙ্গরাজ্য অধিকার করেছিলেন। 

আজ থেকে অনুমান করলে বোঝা যায়, প্রায় খ্রীষ্ট পূর্ব ৪০০ বৎসর পূর্বে দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডার
পঞ্চনদ অধিকার করে বিপাশা নদীর তীরে উপস্থিত হয়েছিলেন তখন তাঁর নিকট প্রাসি (Prasi) এবং গঙ্গারিডয় (Gangaridae) এই দুটি রাজ্যের খবর এসেছিল। এরপর গ্রীকদূত মেগাস্থিনিস পাটলিপুত্র নগরে সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের
সভায় এসেছিলেন। তিনি মৌর্য্য সাম্রাজ্যের রাজধানী প্রাসি’ অর্থাৎ মগধ এবং উহার পূর্ব দিকে
স্বাধীন “গঙ্গারিডয়” রাজ্যের কথা বা উহার রাজধানী ‘গাঞ্জি’র (Gange) কথা উল্লেখ করেছিলেন। ডায়াডোরাস (Diodorus), মেগাস্থিনিসের(Megasthenis) অনুসরণ করে লিখেছেন যে, গঙ্গা নদী  ‘গঙ্গারিডয়’ দেশের পূর্ব সীমা অতিক্রম করে সাগরে পতিত হয়েছে। 
গঙ্গারিডয় রাজ্য হইতেছে বঙ্গদেশ এবং ইহার 
রাজধানী ‘গাজ্ঞী’ হইতেছে ‘সপ্তগ্রাম’; খ্যাতনামা
ঐতিহাসিক টলেমি (Ptolemy) অতীতে গঙ্গাতীরের এই স্থানকে একমাত্র বাণিজ্য -প্রধান স্থান বলিয়া বর্ণনা করেছিলেন।  টলেমি ও প্লিনির
বর্ণনায় গঙ্গা নদীর মোহনা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের
অধিবাসীদিগকেই ‘গঙ্গারিডয়’ জাতি বলা হয়েছে। 
(“………… all the country about the mouths of the Ganges is occupied by the Gangaridai” -Ptolemy. “Point tells us that the final part of the course of the Ganges
is through country of the Ganga rides. “
Vide: History of Bengal, vol,I(D.U.)
আলেকজান্ডারের আক্রমণকালে গঙ্গারিডয় জাতি
যে এক অতি পরাক্রমশালী জাতি ছিল এবং প্রাসিঅয় জাতির সহিত এক যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠা
করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। তাঁহারা
আলেকজান্ডারের আক্রমণ প্রতিহত করিবার উদ্দেশ্যে যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল সে কথা অনস্বীকার্য। বিপাশা নদীর তীরে পৌঁছে সংবাদ পেলেন  গঙ্গারিডয় ও প্রাসিঅয় জাতির এক বিশাল সেনাবাহিনী তাঁকে বাধাদানের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।  এই গঙ্গারিডয় ও বঙ্গদেশের  রাজার অধীনে বিশ সহস্র অশ্বারোহী, দুই  লক্ষ পদাতিক সৈন্য, দুই সহস্র যুদ্ধযান এবং চারি সহস্র বৃহদাকার
রণহস্তী সমূহ ছিল। কারণ অন্যান্য দেশের অধিবাসীগণ দুর্জ্জয় রণহস্তীদিকে ভীষণ ভয় পেত। 
মেগাস্থিনিসের বর্ণনা এইরূপ ঃ
Thus Alexander, the Macedonian, after conquering  all Asia, did not make upon
the Gangaridai, as he did on all others, for when he had arrived with all his troops
at the river Ganges and had subdued all the  other Indians, he abandoned as hopeless
an invasion of the Gangaridai, when he learned that they possessed four thousand
elephants well trained and equipped. “
আলেকজান্ডার গঙ্গারিডয় ও প্রাসিঅয় জাতির সহিত শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ না হয়ে ভারত ত্যাগ করিলেন। 
ঐতিহাসিকগণ গঙ্গারিডয় রাজ্যকে বঙ্গ-রাজ্য এবং উহার রাজধানীকে সপ্তগ্রাম বলেছেন। (Political History of Ancient India, Sri Jogendranath Gupta) , সপ্তগ্রাম বা সাতগাঁও, 
গঙ্গা- যমুনা-সরস্বতী এই ত্রিবেণী তীর্থের অনতিদূরে অবস্থিত এবং সুদূর অতীত কাল হ’তে, 
এই স্থানটি ভারতের বাণিজ্য সম্বন্ধ রক্ষার একটি
 সর্বপ্রধান কেন্দ্র ছিল। লে: কর্ণেল ক্রুফোর্ড (Lieutenant col.Crueford )  এই সম্বন্ধে
 লিখেছেন যে -“Satgaon (seven villages) was one of the oldest cities of India and the ancient Royal port of Bengal. “               

References: The History of Bengal-1943
                      Dr. (Prof.) R. C. Majumdar
                   
                    হুগলি জেলার ইতিহাস -১৯৪৮
                      সুধীরকুমার মিত্র বিদ্যাবিনোদ
   
                      ভারতের ইতিহাস কথা -১৯৯৩
                         ড: কিরণচন্দ্র চৌধুরী

                                                            ক্রমশঃ…

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *