চ য় ন ভৌ মি ক-র কবিতাগুচ্ছ

পরিচিতিঃ চয়ন ভৌমিক এমন একজন মানুষ, যিনি কলকাতাকে কলোনি রূপ থেকে ফ্ল্যাট কালচারে পরিবর্তিত হতে চাক্ষুষ দেখেছেন। যাদবপুর নিবাসী হওয়ার প্রেক্ষিতে তিনি দেখেছেন এবং শুনেছেন নকশাল আন্দোলনের উত্থান ও পতন। নিজে একজন প্রযুক্তিবিদ হওয়ার সুবাদে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিকের মধ্যে যে সূক্ষ্মতম কিংবা স্থুলতর তফাৎ সেই বিপ্রতীপ কোণও চেনেন। স্বাভাবিকভাবেই সেইসবই ফুটে ওঠে তাঁর লেখায়। তাই উচ্চ আধিকারিক পদে চাকরি করলেও নিশ্বাস নিতে তিনি কবিতা লেখেন, তাঁর কথায় শখের এবং সুখের লেখা। চাকরিসূত্রে তাঁকে প্রচুর ভ্রমণ করতে হয়, সেই প্রকৃতি এবং তার সাথে জড়িয়ে থাকা প্রণয়, বিরহ, বিচ্ছেদ, অপমান, অভিমান সমস্ত কিছুই তাঁর কবিতায় সাক্ষরিত। তাঁর লেখা বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ওয়েব ম্যাগাজিনের পাতায় মাঝে মধ্যে খুঁজলে পাওয়া যায়।

 

চ য় ন   ভৌ মি ক-র কবিতাগুচ্ছ

বিপন্ন জল ও ধারালো চাঁদের ধুলো

 

এক

রতিশুদ্ধ রাতে চাঁদ ধারালো হয়।

সমস্ত জল ফালা ফালা করে দেয়
তার তীক্ষ্ণ আলো…

কাঁপে নাচন, উথলে ওঠে
টানাপোড়েন, ঝলসে ওঠে পথ

রাগরাগিণী ভেসে যায় সব
মুঠিতে ধরা থাকে মায়াবী খেলা
নিয়ন্ত্রণের ঠান্ডা শপথ।

দুই

ব্রহ্মকমল হাতে নেমে আসে দূত…

অগ্নি স্তিমিত হয়, নিভু-নিভু পথে
হাতে হাত রেখে উড়ে যায় হাওয়া,
আধপোড়া ছাই মাখা আশ,

খই পড়ে থাকে, পড়ে থাকে
মদ, মন্বন্তর ও ডোমের যষ্টি –

ইহজীবন ফুৎকার, এইটুকুই সামান্য নিবাস।

 

তিন

আচমকাই পথ বেঁকে যায়।

কলকাঠি কে নাড়ে টের পাই না,

শুধু টান বদলায়।
অন্যঘাটের মাঝি নিয়ে আসে
তার ময়ূরপঙ্খী নাও।

আমিও ভেসে যাই বৈঠার নিরুপায় রঙে,

জ্বর কমে যায় ধীরে, তাপমাত্রাও।

চার

কীর্তন শেষে লুট লেগে যায়,

প্রসাদ ছিনিয়ে নেয় ভক্তদল
কেড়ে নেয় আশিস –

ঈশ্বর তো মৃৎমূর্তি

বরদানের সিদ্ধান্ত নেবে আসলে
আবহাওয়া দপ্তর, রেশন অফিস।

 

পাঁচ

ব্রহ্মচারি মেঘ ঘর বাঁধে শ্রাবণের পথ শেষ হলে,
তার কাছে গান চাই অকপটে।

দূর থেকে দেখি তার আকাশী বাড়ি।

কমলা একতারাতে, এ কোন
বিরহ সঙ্গীত তোলপাড় করে

বিহঙ্গ আঁচল, আতপ রঙের শাড়ি।

 

ছয়

সমস্ত অপেক্ষার নীচে দোলে আলোছায়া।

সেখানে প্রবেশ করলে তোমাকে
ছায়াচ্ছন্ন এক বৃক্ষ মনে হয়।

অস্পষ্ট ফল ও ফুল নজরে আসে

তোমার পশুপ্রেম নাড়ায় আমাকে।
আয়ু দিই তোমায় মনে মনে,

বিপজ্জনক সেই নদীর উপর
নিজেকে সেতু করে দিতে ইচ্ছা করে –

শুধু তোমার পারাপারের রাস্তা চিনব বলে।

লেখা পাঠাতে পারেন
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *