অ ম লে ন্দু চ ক্র ব র্তী-র স্মৃতিকথা
মূল ভূত্ অজিত
তবুও ফেরে শূন্য করজোড় শোঁ শোঁ বাতাসের সঙ্গে সখ্যতা ও ফিকাপন্ বাড়ন্ত বেলার খেই সময়ের জল আলো বাতাস গুমোট বৈরাগীর ক্রমশঃ আবছায়ার আচ্ছাদন। বর্তে বাঁচার আবর্তন যাপন । ভোর রাত্রি, রাত্রির ভোর বিশ আঙ্গুলের ফাঁক গলে অনন্ত প্রবাহিত। মাটির খনিক খনন। অতঃপর শেকড় লেখা নিয়ে অনেকে হয়ত। আমি একটু আলাদা ভাবে সময়টিকে ধরিয়ে দিতে চাইছি। আমরা এমনসব নিম্নমধ্যবিত্ত বাড়িতে জন্মেছি, সেখানে অনেক কিছুই বিলাসিতার মধ্যে চলে আসে। লেখক হওয়া শিল্পী হওয়া লাইব্রেরী যাওয়া মহাপুরুষদের জন্মজয়ন্তী পালন করা ঘোর বিলাসিতা। ‘ইসব করে কি হব্যেক ! চাগরি বাগরি বাগানো যায়? না ! তব্যে ! ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো লয়? অজিত এর বাড়িরও ঐ এক কাহিনী। মনে পড়ে নিশ্চই “ল্যাখক হবেক ল্যাখক? “(দ্রাক্ষাপ্লেটে জোনার দানা)
পাশাপাশি দুটি কলোনি ডিগওয়াড্ডি বারো নং কলোনি যেখানে আমাদের “টাটা কম্পানির” কোয়াটার। আর পাশের কলোনি হল “সেন্ট্রাল ফিউল রিসার্চ ইনস্টিটিউট” যেখানে অজিতরা থাকতো। মাঝ বরাবর একটি ভাঙ্গা দেয়াল। যেখান দিয়ে আমাদের আনাযানা করা যেতো।আমাদের আড্ডাটা ছিল মূলত লেখালিখির বিষয় ঘিরে। কখনো দূর্গামন্ডপ, অথবা তার পিছনের মাঠটায়। হয় ঘাসের গালিচায় না হয় রোলারের ওপর বসে। আমরা নতুন পাখাগজানো পাখির মতো ডানাঝাপটা মারছি। আর উড়ান ভরার আকাশটা মাঝে মাঝে দেখে নিচ্ছি। তখন অজিত “অনন্যা” নামের পত্রিকা করা শুরু করে। আমি “শৈলী” নাম দিয়ে। আমরা একে উভয়ের পত্রিকায় লিখতাম।সেটি হল আশির দশক। আমি একটি ব্যাপার ক্লিয়ার করে নিই। এই লেখায় শুধুমাত্র আমাদের সখ্যতার জীবনের খানিকটা সময়কে তুলে ধরার চেষ্টা মাত্র। অজিতের লেখাগুলি নিয়ে নয়। আমি সেই চেষ্টা কোনদিন কোনও সাহিত্যিকের লেখা নিয়ে করিনি। এবং আমি মনে করি সে যোগ্যতাও আমার নেই। সে আস্পর্ধা দেখানোর চেষ্টা থেকে দূরে থাকার অভ্যাস রেখেছি।
তারপর অজিতরা সদর ধানবাদে চলে যায় বাড়িভাড়া নিয়ে লুবিসার্কুলার রোডে, সেখানেও যাওয়া আসা ছিল। সেখানে বসেই আমাদের তয়-হয় । একটি কবিতার বই করা হোক। যৌথপ্রচেষ্টাই হল ও নাম দেওয়া হল “অকবিতা”। তিন জনের। অজিত রায় অমলেন্দু চক্রবর্তী আর বাগনান থেকে যূথীকা দাশগুপ্ত। অথচ প্রকাশন। তারপর সাংবাদিকতায় পুরোদমে জুড়ে গেলো। সাপ্তাহিক ‘পরিবর্তন’ কলকাতা।স্থানীয় হিন্দি “দৈনিক আওয়াজ”। এখানে আমাদের পরিচয় হয় পলাশ বিশ্বাসদার সঙ্গে। হিন্দিতে ধারাবাহিক ভাবে মহাশ্বেতা দেবীর ‘হাজার চুরাশির মা’ অনুবাদ করেছিলেন। আওয়াজ দৈনিক পেপারে। এবং আরও অন্যান্য কাগজে। তারপর আমরা নিজের নিজের কাজে, ভিন্ন ভিন্ন পথে। লেখা লিখতে মাঝে মাঝে ডাক পড়তো। অমনি লিন্ডসে লাইব্রেরী থেকে পত্রিকা করা হবে। সম্পাদনার কাজ অজিত রায়। পত্রিকা মহুয়া। একটি পোস্টকার্ড, তাড়াতাড়ি একটা লেখা পাঠিয়ে দে।
তখন আর সার্কুলার রোড নয়।তেলিপাড়া হীরাপুরে নিজস্ব নতুন বাড়িতে। তারপর “ধানবাদ ইতিবৃত্ত” লেখার সময়। ‘তোকে সময় ও অর্থ দুটোই দিতে হবে একটু বেশিই। মহৎকাজে এগিয়ে এলাম। বড়কাজের সময় অজিত আমাকে অবশ্যই নক্ করতো। এই মহাযজ্ঞ শেষ হতে না হতেই আবার
পোস্টকার্ড। ‘একখানা দমদার পত্রিকা করলে কেমন হয় ?’ দারুন হয়। শুরু হয়ে গেলো খসড়ার পর খসড়া। নামকরণ অজিতই ঠিক করল। “শহর” নামটা কেমন হবে। ফাইনাল হয়ে গেলো। “শহর” নামেই প্রথম দু একটি তেমন সাড়া ফেলতে না পারলেও – তারপর আর ঘুরে দাঁড়াতে হয়নি। গোটা সাত আটটি সংখ্যার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম। চাকরির চাপ, প্রাইভেট চাকরির পদোন্নতি মানেই দ্বিগুন চাপ থেকেই যায়।
তারপর ‘শহর’এর সঙ্গে থাকার পরও আমি যে পত্রিকাটি ‘শৈলী’ নিয়মিত করি সেটিও বরকরার রেখে ছিলাম। ডাকলেই না করতে পারতাম না। আমাদের তর্ক-বিতর্ক মুখোমুখি হত। আড়ল আবডাল এর কোনো আশ্রয় লাগতো না। তবুও ‘শহর’ এ অজিত তার নভেলা “ম্যাওড়া জোন” আমাকেই উৎসর্গ করেছে । শহরে’ আমার তিনখানা নভেলা, দু চারটে কবিতা, বেশ কিছু গল্প। এরপর লাস্ট “শহর”৩৯ এ আমার একটি গল্প। ঐ শেষ তারপর পর পর পর !!! অজিত এর উত্থান সামনে থেকে পরখ করার সুযোগ ঘটেছে। আপ্রাণ চেষ্টা ছিল ঐ লকডাউনের দিনগুলোয় রমার অসুস্থতার সময়। হয়তো সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারিনি, কারণ আমি নিজেও তো অসুস্থ ছিলাম। এই করোনা ভাইরাস কী ক্ষতিটাই না করে গেল! সে কোনদিন আর তার ক্ষতি পূরণ হবে না, হয় না। সবচেয়ে যা বেশি ক্ষতির কারণ তা হলো অর্থনৈতিক ডামাডোল বেশি করে। অনেক প্রিয়জনকে হারিয়ে যেতে দেখলাম। অজিত রায়ও বলতে গেলে ঠিক সেই কারণেই ।