সন্দীপ কুমার মণ্ডল-র গুচ্ছ কবিতা

পরিচিতিঃ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জীববিদ্যায় স্নাতক। বর্তমানে প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত। লিটল ম্যাগাজিনের হাত ধরে লেখালেখিতে আত্মপ্রকাশ। কবিতাকে ঠিক কবিতা মতো করে নয়, বরং কবিতার ভূমিতে দাঁড়িয়ে গদ্যরূপকে ছুঁয়ে দেখার প্রয়াস। প্রথম কবিতার বই ‘স্বীকারোক্তি বাকি আছে‘ প্রকাশ হয় ২০১৮ তে। তারপর ২০২১ এ প্রকাশ হয় ‘নিজস্ব অভিমুখে ফিরে‘ দ্বিতীয় কবিতার বই। বাইফোকালিজম্-এ আজ তাঁরই কিছু কবিতাগুচ্ছ নিয়ে সেজে উঠল।

সন্দীপ কুমার মণ্ডল-র গুচ্ছ কবিতা

ক্লান্তি

 

এক

ভেজা কাকভোরে অথবা নিরস দুপুরে ফেরাবার উপাদান নাই। তীরে দাঁড়ালে দেখি দূরে কোন ডিঙায় ভাসে সন্ধাপ্রদীপ। নদীর দেখা নাই, তার কুলকুল শব্দ শুনি। পা ছুঁলে বুঝি স্রোত, পা ছুঁলে বুঝি টান। পুন্যলোভী তীর্থযাত্রী নই বলেই অনায়াস বলি, চলে যাও… এইমাত্র ক্ষুদ্র গৌরব আমার।

 

দুই


এই গৌরব থেকে বরং চিৎকার করা ভাল। এইসব ভাটিয়ালি, অন্ধকার, দর্শনার্থীর চোখ-শোষা প্রতীক্ষায় ক্লান্ত। বাহুমূলে মেঘ ধরেছ। বুকে বৃষ্টি। একদিন ষাঁড়াষাঁড়ি বান তুমিও ক্লান্ত হবে। সেদিন নদীকূলেও পূর্ণিমা। বিশ্বাস করো, সেদিন আনন্দ-ক্লান্ত হব

 

তিন

এই ক্লান্ত বিশ্বাসে বদ্ধ হয়ে আছি। পৃথিবীর আকার জেনে ইচ্ছা হয় মজা নদীর মতো পথভ্রষ্ট হই। নদী থেকে আলগা হয়ে যাক তীর। তবু তোমার ঠোঁটের কোনে জ্যোৎস্না লেগে থাক সফল বিচ্ছেদের মতো। বৃষ্টিকেও তার মাহাত্ম্য প্রমাণে রেনকোট ভেদ করতে হয়…

“ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু”… সমুখে এঁকে দাও বর্ষার সম্মিলনলিপি…

 

চার


অনোন্যপায় বর্ষার শেষে পিছল নদীঘাট। আর কিছুদিন অপেক্ষা করো শোকহন্তা। একটা সোনামুগ রোদ। ভরানদী এপথে সহজ পারাপার। তবু সহজে ফেরে না ভাটিপথ সেকথা জানে।

গোঁসাই, হাত ধরো। তরনী ছাড়ার আগে। ওপাড়ে ছায়া পড়েছে সোনার দেউল।

 

পাঁচ


সোনার দেউল থেকে ফিরালে। সামিয়ানা থেকে। ধুলোট লিখতে লিখতে আমার আবির আকাশ। তোমার চরণরাঙা। অবসন্ন শ্রমণের আর্তিতে বসি।

এপথেই ফুটে আছে ব্রহ্মকমল গাঢ় প্রতীক্ষার বিনিময়ে।

 

ছয়


বিনিময়ে হারিয়ে ফেলি নাম। অতীত মধুমাস। ভ্রমণাদি সমাপন হলে পেরিয়ে যাই প্রতীক্ষালয়। তিনবার নারায়ণ নাম নিলে পিছন ফিরে তাকাতে নেই।

“এই দীনতা ক্ষমা করো প্রভু”। সমুখে এঁকে দাও চরাচরের চরণচিহ্ন।

লেখা পাঠাতে পারেন
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *