বিশ্বমিথের দরবার(৯ম পর্ব)
কলমে-দে ব লী না রা য় চৌ ধু রী ব্যা না র্জি
ছবিঃ সু নি পা ব্যা না র্জি
এর আগে স্লাভিক ও সাইবেরিয়ার মিথ নিয়ে আলোচনা করেছি। তারপর দু সপ্তাহের বিরতি নিয়ে আবার ফিরে এলাম বিশ্বমিথের দরবারে। আজকের বিষয় ইনুইট মিথলজি। কি হলো? বুঝলেন না ? তা হল হিম তুষারের দেশ, এস্কিমোদের দেশের পৌরাণিক কথা। তাদের মধ্যেও জেগে আছে সৃষ্টি, অস্তিত্ব, জীবনযাপন, কর্মচেতনা ও ধর্মবিশ্বাস। প্রতিটি সভ্যতার মতো , এই সভ্যতারও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে।
প্রথমতঃ ইনুইৎ সভ্যতার গভীরে আছে নৃতাত্ত্বিক বিশ্বাস। তারা মনে করত, প্রাণ সৃষ্টি, জীবনচর্যা ও বিবর্তনের পিছনে লুকিয়ে আছে প্রকৃতির প্রবল প্রভাব। সমস্ত কিছুর অন্তরে প্রকৃতির তৈরি কার্যকারণ নিহিত আছে ।
দ্বিতীয়তঃ দেবী-দেবতা, সূর্য-চন্দ্র-নক্ষত্র, প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্য প্রভৃতি সব কিছুর পিছনে আছে মানুষের অভিযান। বা এই সব কিছুকে সংযোগ করে মানুষের অভিজ্ঞতা বা রহস্য উদঘাটনের ইচ্ছা।
তৃতীয়তঃ এস্কিমো বা ইনুইৎ কালচার পৃথিবীকে একটি তাবুর মতো দেখতে বলে কল্পনা করেছেন। ঠিক যেন একটি কাপড় কয়েকটি লাঠির উপর ন্যস্ত।
চতুর্থতঃ এই বিশাল তাবুর ন্যায় পৃথিবীর চারটি মুল দিক – উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিমে ছুরির আঘাতে ফালা করা আছে যাতে চারদিক থেকেই দিকজাত হাওয়া পৃথিবীতে প্রবেশ করতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি এস্কিমোদের বাসস্থান ইগলুর ধারণার প্রতিচ্ছবি।
পঞ্চমতঃ গোটা পৃথিবীর সৃষ্টি একদিনে বা একবারে হয়নি। এটা অনেকটাই একটা চাড়াগাছের মতো, ক্ষুদ্র থেকে বিশালাকার হয়েছে।
ইনুইৎদের সৃষ্টি কথাঃ
সমগ্র বিশ্বের মিথলজি ও লোক বিশ্বাসেই পৃথিবী ও প্রাণ সৃষ্টি নিয়ে খুব আকর্ষণীয় সব গল্প বা গাঁথার প্রচলন আছে। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এই সৃষ্টিকাহিনী পাওয়া গেছে আলাস্কার প্রাচীন গাথায়।
ইনুইৎ সভ্যতার ব্যাপ্তি বেরিঙ সমুদ্র থেকে আলাস্কা ও উত্তর কানাডা হয়ে গ্রীনল্যাণ্ড অব্দি। প্রকৃতির এক চরমভাবাপন্ন বৈশিষ্টের সাথে প্রতিনিয়ত মানিয়ে নিতে নিতে এখানকার কর্মঠ, পরিশ্রমী মানুষ তাদের পরিচিত জীবনধারার রঙেই এঁকেছে তাদের পৌরাণিক বিশ্বাস ও কাহিনীকে।
সৃষ্টি কাহিনীঃ
ইনুইৎ সভ্যতার সৃষ্টি কাহিনীর মধ্যে নিহিত আছে তাদের জীবনচর্যার প্রতিচ্ছবি। আলাস্কার যাওয়া ইতিহাসের শিরায় লুকিয়ে আছে এই সভ্যতার সৃষ্টিগাঁথা। তারা বিশ্বাস করে তুলুঙ্গুসাক নামে এক প্রাণীর সৃষ্টি হয় সবার আগে। সৃষ্টি হয় অতল অন্ধকার ও রুপালি আকাশের ঘেরাটোপে। কিন্তু তুলুঙ্গুসাক বুঝতে পারেন যে তার আগে থেকে এক অদৃশ্য অস্তিত্ব কায়েম আছে। তার নাম সোয়ালো। এই অদৃশ্য অস্তিত্ব তুলুঙ্গুসাককে দেখায় যে অতল গহীনে নরম পিছল পলিমাটি একটু একটু করে শক্ত হচ্ছে। তুলুঙ্গুসাক এরপর ধারণ করে বিশাল এক কাকের রূপ। পালক, পাখনা, চঞ্চু সম্বলিত এই কাকরূপে তুলে আনেন সেই মাটি। তা দিয়ে সৃষ্টি করেন গাছপালা , মানুষ ও বিভিন্ন ধরনের প্রাণী। আস্তে আস্তে বংশবৃদ্ধি করে তারা সভ্যতার রচনা করে। তার এই রূপ ছিল এমনই যা তিনি প্রয়োজনমতো ত্যাগ করতেও পারতেন। একটু একটু করে বেড়ে উঠছিল পৃথিবী। প্রত্যহ নির্মাণকাজ শেষে তিনি উড়ে যেতেন তারাদের আস্তানায়। সোয়ালোর সাহায্যে তুলুঙ্গুসাক সৃষ্টি করলেন এক বিশাল পৃথিবী।
তুলুঙ্গুসাক মানুষকে শিখিয়ে দেন জীবনধারণের পথ ও পদ্ধতি। মাছ ধরা , শিকার করা , ঘর ও নৌকা বানানোর পদ্ধতিও করায়ত্ত করে মানুষ। কিন্তু মানুষের লোভ দেখে ক্ষুব্ধ হলেন ইনুইৎ সভ্যতার সৃষ্টিকর্তা। মানুষ নিজের সুখের জন্য অনর্থক প্রাণীহত্যা করতে থাকে দেখে ক্রূদ্ধ হয়ে তিনি সরিয়ে নেন সূর্যরশ্মির স্পর্শ। এস্কিমো সম্প্রদায়ের জীবনে নেমে আসে ঘোর আঁধার। তাদের কষ্ট দেখে তুলুঙ্গুসাকের ভাই লুকিয়ে সাহায্য করেন মানুষকে। তিনি সূর্যের আলোর অধিকার ফিরিয়ে দেন মানুষকে।মিথ অনুযায়ী, তুলুঙ্গুসাকের ভাই আর এই অপরাধেরশাস্তি পান বেশ অদ্ভূত ভাবে।তিনি আর কখনোই ফিরতে পারেননি তারাদের দেশে।আর তার পরবর্তী প্রজন্ম কোনদিনই ফিরতে পারেননি তার আসল রূপে। কাক রূপেই তারা এই পৃথিবীর বুকে থেকে গেছে বলেই ইনুইৎ দের বিশ্বাস।প্যালিও – আর্ক্টিক সাইবেরিয়ানরা তাই কাকের সাথে শুভ ও অশুভ দুইরকম ধারণাই জুড়ে রেখেছেন।
আজ এই অব্দি থাকে।
পরের সোমবার আবার আসব ইনুইৎদের মিথ ও পৌরাণিক বিশ্বাস নিয়ে।
বিশ্বমিথের দরবারের আগের পর্ব পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন
বিশ্বমিথের দরবার(৮ম পর্ব) কলমে-দে ব লী না রা য় চৌ ধু রী ব্যা না র্জি ছবিঃ সু নি পা ব্যা না র্জি