কবির গদ্য

 

ঈশ্বরী ভাগফল এবং পিঁপড়ের পারিশ্রমিক

প্র কা শ   ঘো ষা ল



নক্ষত্রের বৃষ্টি পড়ছে বাইরে। না, তেমন করে কোন কিছুই বলা হয়নি কোনদিন। কিছুকাল আগে অব্দি যে মরে যাওয়া দিন-রাত্রি ছিনে জোঁকের মতো বুকের বাঁদিকে বসে থাকত তার কথাও বেমালুম ভুলে গেছি। বলা ভাল ঐ সব ইনসেক্টই যে বাস্তবিক দুনিয়ার দন্ড মুন্ডের বিধাতা সে কথা জেনেও বিলক্ষন ভুলে গেছি। অন্নপাত্রে অন্ধকার ঝুঁকে পড়লে যা হয় আর কি।চরাচরের এই হিসেব করতে করতে সূর্যাস্ত পেরিয়ে যায়। আমার ভেতর মহলের দৌড় ঐ ব্যালকনি পর্যন্তই। ব্যস, তারপর সেই একই ফুটনোট। গাছের শিকড়ে জড়িয়ে যাওয়া শুধু শূন্য খাতার জমাখরচ।
আসলে হয়েছে কি ‘তুমি’ এই শব্দের গুহা থেকে যে সব কার্ভ অনবরত হাজার হাজার ঈশ্বরের পিছনে ছোটে সে বিষয়ে আজ পর্যন্ত আমার বিন্দুমাত্র কোন বুদ্ধতা বা জ্ঞান গম্যি আসেনি, অথচ তার একটা বিহিত না করলেই নয়। কেননা ঐ তুমিতেই নাকি ব্রহ্মজ্ঞান। তুমিতেই আমার ইহকাল পরকাল।
বলা বাহুল্য এখানেই এক ঘোর অস্থিরতার জন্ম হয়। সত্যি বলতে কি, সময়ের ছোট ছোট বর্ণমালা ইতিবাচক অপেরায় যখন বেজে ওঠে, ঠিক তখনি মনে হয় পৃথিবীর কয়েকটা রাত যেন নিঃশব্দে নেমে আসছে মধ্যবয়স্ক ভাঙা হাঁটুর কাছে। রাত গভীর হলে টের পাই চোখের পাতায় কতো ফ্রক পরা জোনাকির ওড়াওড়ি। আহা। শুনি তাদের নিজস্ব গান। যেন বা ঘোর লাগা এক শূন্যতার ভেতর অপরূপ ছায়া মূর্তির হাসি। কেমন আমাকে অবশ করে দেয়। মনে হয় আমার হাত পা যেন পড়ে আছে রোগা শহরের এক প্রান্তে। চারপাশ অব্দি লতায় পাতায় জড়ানো পুরনো সব জামার অক্ষর, রোদ্দুর মাখা জুতোর ম্যাগনেট, ঝর্না কলমের ব্যাকরণ একে একে সব ভিজে যাচ্ছে ঘুম ঘুম জলের নেশায়। বাস্তবিক ঐ সময় আমার খুব জল তেস্টা পায় । ফলত, এক আঁজলা জলের জন্য সমস্ত নদীর নাম ধরে ডাকতে থাকি, এবং অবাক হই এই ভেবে যে, কে বা কারা আমার মাথায় কখন তিন শান্তির জল ছিটিয়ে ইতিমধ্যেই চলে গেছে,তা ঘূনাক্ষরেও টের পাই না আমি। বস্তুত তারপরেই কোথাও যেন একটা ঘিলুর চমক। রাত্রিময় জানলায় আলো ছিটকে পড়ে। স্তব্ধতার কথা শুনতে শুনতে আমি বিহ্বল হয়ে পড়ি, এবং আদ্যন্ত ছুঁয়ে ফেলি তুমি’র শান্ত মুখ, যা কেবলি অবিরাম শূন্যতার কাছে দু’হাত ছড়ানো নির্জনতা এ ছাড়া আর কিই বা বলা যায়। বলতে দ্বিধা নেই, তখনি কুয়াশার রিংটোন বেজে ওঠে। ডুবে যায় আমারই গলার স্বর।তাহলে কি করা যায় এখন। ভাবতে বসি।আমার স্বরবর্ণগুলোকে যে আমার নকল প্রতিবেশী মনে হয়। যাদের আমি বাস্তবিক চিনি না। কোনদিন দেখিনি। স্বীকার করছি, ঈশ্বরের কোন পথ আমি জানি না,যে পথে তুমি’র ঘুঙুর বাজে, এমনকি কলেজ বয়সে না-লেখা চিঠির বোকামির কথা ‘তুমি’কে কখনো বলিনি আমি, কেননা ঐ চিঠির ভেজা অক্ষরে আমি আগেই জেনে গেছি এ শরীর ঘাসের,গাছের, বরফ পাতার। ভেতরে ভেতরে কেবলি উঁকি মারে বাদামি রঙের প্রশ্রয়।

হে পাঠক, বিশ্বাস করুন, ঐ তুমি’র জন্য আধপোড়া চিতার মতো জ্বলে জ্বলে খাক হয়েছি প্রতিদিন। অকাল দর্শনের ইচ্ছায় বারবার আমি ছুটে গেছি মেঘের পাড়ায়। কি অদ্ভুত ঘূর্ণির জালে কতবার যে জড়িয়েছি তা ভাবলে আজও গায়ে কাঁটা দেয়। না, তবু্ও তুমি’র হাল হদিস টের পাই না। কিন্তু না’এর কাছে বশ্যতা স্বীকার করা ধাতে সয় না বলে, আমি এই পৃথিবীর রাতের বলরুমে অসংখ্য হত্যা আর আহতের কোরিওগ্রাফ দেখতে ছুটে গেছি, এবং শেষ অব্দি যাদুবলে খুঁজে পেয়েছি তুমি’র ছদ্মনাম, এবং এও ভেবেছি প্রকৃত নাম পেলে এবার ‘তুমি’কে জড়াবো তুমির আদলেই, কিন্তু এখনো যে জানা হয় নি তুমি’র নদীরূপ, আর পাথুরে সভ্যতার কথা,যেখানে ভাসমান দরজায় আঁকা নাভি থেকে ফুঁসে ওঠে সাপের ফণা। তাহলে? সূর্যের কাছে ঈশ্বরী ভাগফল আর পিঁপড়ের পারিশ্রমিক ছাড়া এখন আর কিই বা আশা করা যায়।

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *