প্রথম কলঙ্ক
বাবা বললেন।
না, বাবা কিছু বলতে পারলেন না।
মা বললেন।
তুই আমাদের পরিবারের প্রথম কলঙ্ক।
কাকিমা বললেন।
রিয়া, তুই এতদূর নীচে নামলি?
কাকু বললেন।
দু’দিন পর সকলেই জানবে। আমাদের পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতে হয়। সকলেই ছি ছি করবে।
দাদা সাপের মতো ফুঁসছিল। ছোবলটা মারল। হতচ্ছাড়ি। খবরটা জানানোর আগে রেললাইনটাও চোখে পড়ল না।
দিদি রিয়াকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। সে রিয়াকে টেনে নিয়ে গেল অন্যদিকে। দিদি একটু আদুরে গলায় বলল, কে করল তোর এই সর্বনাশ? বল। ছেলেটা তোকে বিয়ে করবে তো?
ছোট বোনটা সত্যিই ছোট। সে মা-কাকিমাদের
এ সব কথার কোনো অর্থ খুঁজে পেল না। সে কেবল যে যখন কথা বলছে, তাদের মুখের দিকে তাকাচ্ছে।
কাকিমার ফোন পেয়ে দিদি এসেছিল। জামাইবাবু আসতে পারে নি। কি যেন একটা জরুরি কাজ আছে তার। জামাইবাবু কি বলত, শুনতে পেল না রিয়া।
সকলের কথা সকলেই শুনতে পাচ্ছিল। কেবল রিয়ার কথা কেউ শুনতে পেল না। ক্লাস নাইনে পড়া রিয়া দিদির আঁচলের তলায় মুখ লুকিয়ে মনে মনে বলল, জামাইবাবুর নামটা বলে আমি তোদের সংসারে অশান্তি চাই না রে দিদি।
মাধ্যমিকের অংক খাতা
-ওগো শুনছ? দেখো। আমাদের বাপনের মত নাম ছেলেটার। মাধ্যমিকে অংকে পাশ করতে পারে নি বলে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
নির্মাল্যবাবু স্নান করার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। নন্দিতার কাছ থেকে পেপারটা নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই পড়তে লাগলেন। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললেন পুরো খবরটা৷ তারপর ধপ করে বসে পড়লেন মেঝেতেই।
-তোমার আবার হলো কি? কোথাকার কে বাপন। জানো না। চেনো না। শুধু আমাদের ছেলের নামের মতন নাম। যাও। তাড়াতাড়ি স্নান করো স্কুলের দেরী হয়ে যাবে। ঝংকার তুলে গেল নন্দিতা।
মাসখানেক আগে এক সকালবেলা মাধ্যমিকের খাতা দেখছিলেন অংকের শিক্ষক নির্মাল্যবাবু।
একটা খাতায় লেখা, ‘স্যার, দয়াকরে অন্তত পাশ নাম্বারটা দেবেন। দু’শ টাকা গেঁথে দিলাম। নিজের পরিশ্রমের টাকা। খুব গরীব আমরা। ফেল করলে বিষ খাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। ‘
মেজাজ খিঁচড়ে গেল নির্মাল্যবাবুর। আর তিন নাম্বার দিল না ছেলেটাকে। টাকাটা খাতায় গাঁথা না থাকলে
তিনি তিন নাম্বার বাড়িয়ে দিতেন।
শুধু নিজের ছেলের নামের সঙ্গেই মিল ছিল না। পদবিটারও মিল ছিল। তাই পরীক্ষার খাতাটা স্পষ্ট মনে আছে তাঁর। নির্মাল্যবাবু কাঁদতে লাগলেন।