চিড়িয়াখানা
ছুটছে কেমন বাঁদর ছানা, ডাকছে শেয়াল পুচ্ছ নেড়ে;
ওরাংওটাং ভ্যাংচালো মুখ, যেইনা ভালুক আসলো তেড়ে।
ওমনি উধাও বকবাবাজী, হাসছে সারস শান্ত ঝিলে,
পাঁচটি বেবুন গাইছিল গান, নাড়ছিল কান সবাইমিলে।
তাথই তাথই ময়না নাচে,ওইযে টিয়া, ওই যে চড়াই…
পেখম তোলা এক ময়ূরীর একটুও নেই রূপের বড়াই।
শালিক যদি তবলা বাজায় কুমির হাসে বার করে দাঁত,
সিংহ তখন কেশর নাড়ায়, চারটি থাবা, চারখানি হাত।
জিরাফ কেমন লম্বা মতন, চার ঠ্যাং এ তার বাজছে নুপুর,
কচ্ছপেরা অশথতলায়,হাত পা ঢেকে হচ্ছে উপুড়।
বাঘের এখন কষ্ট ভীষণ, গুহায় তেমন হয় না যে ঘুম,
হরিণ যদি করতো আদর, যখন হতো রাত্রি নিঝুম…
সাপ চলেছে হিরোর মতন, কাচের ঘরে ওকেই মানায়,
দুপুর দুপুর রোদ উঠেছে, আফ্রিকা আজ চিড়িয়াখানায়।
একটি বিকেল
(কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় কে নিবেদিত)
একটি বিকেল আসুক উড়ে
তোমার জন্মদিনে,
সাজিয়ে দেব মঙ্গলঘট
গাছের পাতার ঋণে।
সেই যে তোমার হলুদচিঠি
বাগান ভরা ফুলে…
হাজার ছেলে হাজার মেয়ে
স্বপ্ন ওঠে দুলে।
বসন্ত ওই ডাক দিয়েছে
একটি কোকিল একা,
মৌমাছিরা সঙ্গী খোঁজে
নেই যে ফুলের দেখা!
তবুও মানুষ ফুটপাথে আজ
একলা কাঁদে কবি,
মিছিল চলে, নেই অভিমুখ,
নেই ফাগুনের ছবি।
প্রজাপতির ডানায় আঁধার
আইবোড়ে সেই মেয়ে…
কোন উদাসে হৃদয় হারায়
পথের পানে চেয়ে।
দেওয়াল দিলাম রঙিন করে
ধানদুর্বার আশায়,
জন্মদিনে তোমায় খুঁজি
মায়ের বাংলা ভাষায়।
মন
মনের মধ্যে মনের মানুষ মনটা জুড়ে থাকে,
মনের ভেতর বাজনা বাজে, আলোর ছবি আঁকে।
টাপুর টুপুর বাজায় নূপুর, নীল আকাশের পরী,
মেঘের ভেতর মেঘের ছানা, খেলছে লুকোচুরি।
মনের ঘুড়ি একলা ওড়ে তেপান্তরের মাঝে,
নদী, পাহাড়, বন, জঙ্গল, সাজলো নানান সাজে।
টাক ডুমা ডুম, বাজনা বাজায় কুমোরপাড়ার মামা,
গড়ছে ঠাকুর নানান রঙের, কিনছে খুকু জামা।
কাশের বনে দামাল তমাল, ফিঙে রানীর খেলা,
মৌটুসীরা গাইছে উদার, স্নিগ্ধ মনের মেলা।
মেঘের ভেলা ওই ভাসমান, যাচ্ছে অচিন দেশে,
আপন বেগে চপল নদী ঠিক মোহনায় মেশে।
২২শে শ্রাবণ
গৌরী আকাশ সাজিয়ে দিল শ্রাবণ মেয়ে
নীলাম্বরে শ্রাবণমেয়ের সবুজ শাড়ি,
অঝোর ঝরে পাতায় পাতায় দুষ্টুমিতে
শ্রাবণ মেয়ে মেঘের বুকে রঙিন পরী।
মাঠের টানায় একলা বাতাস শ্রাবণ মেয়ের
অলীক মেঘের সুরের ডাকে সজল ধারা…
খেতের ধারে বৃষ্টি মাতন টাপুর টুপুর
শ্রাবণ মেয়ের উদাস ভুবন পাগল পারা।
শ্রাবণ মেয়ে উলুক ঝুলুক ওড়না ওড়ায়
হয়তো কোথাও দুঃখ নামে নয়ন জলে
শ্রাবণ মেয়ের সূর্য সাজায় গহীন হৃদয়
শ্রাবণ কাঁদে বিশ্বকবির চরণ তলে।
মাকে আমি
মাকে আমি সাজিয়ে রাখি শাল পিয়ালের মাটির ঘরে
ফুলের মতন, নদীর উথাল, পাখির মতন হৃদয় ভরে।
সাজিয়ে রাখি উজাড় করে মন বাসনার নয়ন জুড়ে..
সাজিয়ে রাখি স্নেহের সুধায় অনন্তময় অন্তঃপুরে।
মাকে আমি আগলে রাখি দুঃখ-সুখের জীবন মাঝে, মাকে আমি বক্ষে রাখি শান্তি প্রেমের দিবস সাঁঝে
সাজিয়ে রাখি বিমল প্রেমে, সাজিয়ে রাখি অহংকারে
সাজিয়ে রাখি গল্প কথায় হারিয়ে যাওয়ার মেঘের পাড়ে।
মাকে আমি প্রাণের ভেতর, দেবার মতন যত্ন করি
মাকে আমি স্তোত্রপাঠের মন্ত্র দিয়ে আদর করি।
সাজিয়ে রাখি জ্যোৎস্নারাঙা স্বর্গলােকের ভালবাসায়…
সাজিয়ে রাখি সদ্যোজাত ফুলকুঁড়িটার বাঁচার আশায়।
মাকে আমি উথালপাথাল স্বপ্নে রাখি অলির মত,
মা আছে তাই ছন্দে থাকি, জুড়ায় মনের দগ্ধক্ষত।
শরৎ মেয়ে
হলুদ বরণ ফুল রয়েছে শরৎ মেয়ের হায় আঁকা লতা, শরৎ মেয়ের মাথায় আকা ঝুমকো লতা
আকাশ যেন শরৎ মেয়ের রঙিন শাড়ি
বাঁশির মতন শরৎ মেয়ের গল্পকথা।
ঝরনাধারায় শরৎ মেয়ের আঁকন-বাঁকন ।
বাঁধনহারা চৈতন্যের তুমি মেয়ে,
দুই দিকে দুই পাড়ের মায়ায় নরম মাটি
স্বপ্ন আসে মাঝদরিয়ায় নৌকা বেয়ে।
শরৎ মেয়ে পেখম তােলা মন-ময়ূরী।
পায়ের ধুলায় সবুজ ঘাসের আসন পাতা,
শরৎ মেয়ের জন্য জাগে স্নেহের বাতাস।
শরৎ মেয়েই আশিন মাসের নকশিকাঁথা।
কাশের বনে শরৎ মেয়ের সােনার কাঁকন।
সূর্য ওঠা ভােরে সে নেয় হৃদয় টানি,
শরৎ মেয়ের জন্য জাগে কুমােরপাড়া
শরৎ সাজায় দুর্গামায়ের চরণখানি।।
ভুল
পড়তে কখন ভুল হয়ে যায় স্যারের পড়া,
ভুল করে টান ছন্দে দিলেই, বন্ধ ছড়া।
হাপুস নয়ন অঙ্ক সকল পড়ার ঘরে,
ভুল করে যােগ বিয়ােগ হলেই কান্না ঝরে।
একলা ঘরে ভুল হয়ে যায় তখন দেখি
ম্যাডাম আমার কানটি ধরে দাঁড়ায় একি।
ভুল হয়ে যায় দোষ ও গুণের মধ্যি খানে,
ভুল করে বিষ ছড়ায় কখন,কে আর জানে?
ভুল যদি কেউ স্বীকার করে দুঃখ তাে নেই,
ভুলের মাশুল গােল্লা মেরে যায় আকাশেই!
বৃষ্টি দিনের ভুল গুলি সব যত্নে রাখি,
ঋণের বােঝায় ভুল হলে সেই দুঃখে থাকি।
ভুল থেকে ঠিক শিক্ষা পেলেই জীবন ভরে,
ভুল হলে কি জ্বলবে আলাে ঠাকুর ঘরে?
জীবন জুড়ে ভুলের হিসেব কষ্ট জমায়,
ভুল গুলাে সব ফুল হয়ে যায় মায়ের ক্ষমায়।