রুমির কবিতা                    অনুবাদ – তৌফিক হোসেন 

এবারের অন্যভাষার সাহিত্যে পার্সি ভাষার    
        কিংবদন্তী কবি রুমির কবিতা অনুবাদ করলেন 
                                                        কবি তৌফিক
রুমির কবিতা
                  অনুবাদ – তৌফিক হোসেন 
সংক্ষিপ্ত কবি পরিচিতি : মৌলানা জালালউদ্দিন রুমি (1207-1273) ছিলেন শ্রেষ্ঠ ও কিংবদন্তিসম অতীন্দ্রিয়বাদী সুফি কবি। জন্ম আফগানিস্তানের বল্খে।স্থিতু হন এশিয়া মাইনরের কোনিয়ার তুরস্কে।তিনি লিখেছিলেন পার্সি ভাষায়।’মসনবি’ তাঁর শ্রেষ্ঠ তথা বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ।কবি ছাড়াও তিনি একজন সুফি ধর্মগুরু ছিলেন।
[ কোলম্যান বার্কসের ইংরেজি অনুদিত Bird Song কবিতার বই থেকে কবিতাগুলি অনুবাদ করা হয়েছে।]
[এক]
পাখির গান আমার কামনাকে দেয় মুক্তির স্বাদ।
আমি ঠিক ওদের মতোই উল্লসিত,
কিন্তু ভাষায় বলবার নয়।
হে চিরন্তন আত্মা,অভ্যাস করো
কিছু গান অথবা অন্য কিছু, আমার মধ্য দিয়ে !
[দুই]
ভালোবাসার পথ নয় কোনো
সূক্ষ তর্কের।
ওখানের দরজা
ধ্বংসের।
পাখিরা নির্মাণ করে বিরাট আকাশ বৃত্ত
ওদের মুক্তির।
কিভাবে ওরা শিখল তা?
ওরা নিচে পড়ে,এবং পড়তেই থাকে
ওরা সব প্রদত্ত ডানা।
[তিন]
তোমার কণ্ঠসঙ্গীতকে করো
স্পষ্ট ও যথেষ্ট জোরালো
যাতে এক সম্রাটের আগাগোড়া পতন হয়,
দরজায় দাঁড়ায় বিনত মিনতি নিয়ে।
 [চার]
আমি বাক্য ও গোটা গোটা পাতা মুখস্থ করেছি
কিন্তু ভালোবাসা নিয়ে কিছুই বলা যাবে না।
তোমাকে অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষণ না তুমি আর আমি
একসাথে বসবাস করছি।
কথায় কথায় আমরা
তারপর…ধৈর্য্য ধরব…তারপর।
 [পাঁচ]
কখনো কখনো আমি তোমাকে সুরা অথবা পেয়ালা বলে ডাকি,
যা থেকে সূর্যের আলো ঠিকরে ওঠে,
অথবা যা চাঁদের আলোয় মৃদু নিমজ্জিত।
আমি তোমাকে বলি ফাঁদ ও টোপ
এবং আমার অনন্ত ক্রীড়া,এই
সব কিছু তোমার নাম না-উচ্চারণ করতে।
  [ছয়]
আমি যথেষ্ট সুখী ছিলাম
খোলের ভেতর মুক্তার মধ্যে নীরব থেকে।
কিন্তু অভিজ্ঞতার ঝড়
আমাকে গোপন স্থান থেকে সপাটে বের করলো এবং
ঢেউ গড়ে গড়িয়ে দিল তীরে,যাবার সময়
শুনিয়ে দিল উচ্চকন্ঠে সমুদ্রের গোপন কথা এবং তারপর
সেখানে কাটালাম,কুয়াশার মতো ঘুমিয়ে থাকলাম
পর্বতের গায়ে, আরেকটি নীরবতা।
[সাত]
আমার ছিল জলন্ত খরতা
এবং এক বহতা মিষ্টতা।
তরঙ্গগুলি ছিল মায়া।
শিখাগুলি ছিল বরফ গঠিত।
আমি কি তখন স্বপ্ন দেখছিলাম?
আমি কি এখন জেগে আছি?
[আট]
আমি বন্ধুর খোঁজে চারিদিকে ছুটে বেড়াই।
আমার জীবন প্রায় শেষ,
কিন্তু আমি এখনো ঘুমন্ত !
যখন এটা হবে,যদি এটা হয়,
যে আমি বন্ধুর দেখা পেলাম,
আমি কি হারানো বছরগুলি ফিরে পাবো?
[নয়]
আমরা  এই পৃথিবী অন্বেষণ করি পরম মুক্তির জন্য
জন্মের সময় যে বন্ধনে আমাদের আবদ্ধ করা হয়েছিল তার থেকে
এবং বন্ধনমুক্ত হই মৃত্যুতে।
আমরা এক নদীর পাশে ঘুমন্ত,তৃষ্ণার্ত হয়ে।
সারা জীবন অভিশপ্ত ও হতভাগ্য,
এক বৃদ্ধ ইতি টানে এক ধ্বংসের যথার্থ স্থানে,
সম্পদ থেকে কয়েক পা দূরে !
  [দশ]
এক মরুভূমি আছে
আমি হাঁটতে চাই,
এক প্রসারিত শূন্যতা,
শান্তি
এর যে কোনো বোধগম্যতার ঊর্ধ্বে।
                        ★★★
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *