২৫
সমুদ্রগুপ্ত সমতটকে গুপ্ত সাম্রাজ্যভুক্ত না করলেও এ রাজ্যের রাজা তাঁর আনুগত্য স্বীকার করতেন, বাৎসরিক কর দিতেন। ৫0৭-৫০৮ সালে
বৈন্য গুপ্ত গুপ্তসম্রাটদিগের সামন্তরাজ্য হিসাবে পূর্ববঙ্গে রাজত্ব করিতেছেন। পরবর্তী সময়ে , গুপ্ত সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে তিনি ‘দ্বাদশাদিত্য’
এবং মহারাজাধিরাজ’ উপাধি গ্রহণ করে স্বাধীনতা
ঘোষণা করেন। উত্তরবঙ্গ বা পুণ্ড্রবর্ধন অন্তত ষষ্ঠ
শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রধান কেন্দ্র ছিল। উত্তর বঙ্গে গুপ্ত আমলের বেশকিছু
তাম্রশাসন আবিষ্কার হয়েছিল। পুণ্ড্রবর্ধন, পুণ্ড্রবর্ধনভুক্তি নামেও পরিচিত ছিল। গুপ্ত
সম্রাটগণ এই পুণ্ড্রবর্ধনভুক্তির প্রাদেশিক শাসনকর্তা কর্তা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিযুক্ত করতেন। গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়কালে
এই রাজ্যে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা
গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের ফলে বিনষ্ট হয়। সৃষ্টি হয়
বহুসংখ্যক রাজ্য। যেগুলিতে সামন্তরা স্ব-প্রধান হয়ে নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। সৃষ্টি হয় বহু
সংখ্যক রাজা। বৈন্য গুপ্তের স্বাধীনতা ঘোষণা, ধর্মাদিত্য, সমাচারদেব প্রভৃতি নতুন রাজার আবির্ভাব। ফরিদপুরের কোটালিপাড়ায় প্রাপ্ত পাঁচটি লিপি এবং বর্ধমান অঞ্চলে প্রাপ্ত একটি লিপি থেকে তিনজন মহারাজাধিরাজের নাম
পাওয়া যায়। এনারা ছিলেন গোপচন্দ্র, ধর্মাদিত্য
এবং সমাচারদেব।
বাঙালীর ইতিহাস’ প্রণেতা নীহাররঞ্জন রায় মনে করেন যে, ইঁহারা তিনজন মিলিয়া প্রায় ৩৫ বৎসর
রাজত্ব করেছিলেন। এবং ইঁহাদের রাজ্য সীমা
বর্ধমান বর্ধমান অঞ্চল হতে ত্রিপুরা পর্যন্ত ছিল।
এই তিন জনের মধ্যে গোপচন্দ্র ছিলেন প্রধান
নৃপতি। তবে সমাচারদেবের মৃত্যুর পরে আরও
কতিপয় রাজা এইসব অঞ্চলে রাজত্ব করেছেন।
গোপচন্দ্র,, ধর্মাদিত্য প্রভৃতি রাজা সুদক্ষ ও
শক্তিশালী শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন।
যার ফলে বাংলাদেশ এবং উহার অধিবাসীরা
একদিকে যেমন সমৃদ্ধশালী হয়েউঠৈছিল তেমনি
তাহারা নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠেছিল।
“All the records taken together undoubtedly imply that there was a free, strong and stable government in Bengal which brought peace and prosperity to the people
and made them conscious of their power
and potentialities. ” (History of Bengal (D.U.)
২৬
আস্রফপুরের দুটি লিপি এবং চৈনিক দুজন পরিব্রাজক- ই-সিং এবং সেং-চি’র বিবরণ থেকে
সমতটের এক বৌদ্ধ রাজবংশের উল্লেখ পাওয়া যায়। ‘খড়্গ’ এই উপাধি থেকে অনুমান করা হয় যে
এসকল নৃপতি হয়ত কোন পার্বত্য কোল বা গোষ্ঠীর প্রতিনিধি ছিলেন এবং সামন্তরাজ হিসাবে
রাজত্ব করিতেন। পরবর্তী কালে এই বংশ স্বাধীন ভাবে রাজত্ব শুরু করেন। প্রথমে খড়্গ বংশের প্রাধান্য ছিল ঢাকা ও ত্রিপুরা অঞ্চলে, পরে সমতটে
রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। সপ্তম শতকে সমতটে রাজত্বকারী আরও দুটি সামন্তরাজবংশের উল্লেখ
পাওয়া যায়। যথা লোকনাথ বংশ এবং রাত বংশ।
রাত বংশের রাজাগণ স্বাধীন নরপতির মতন ব্যবহার করিতেন।
নালান্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শীলভদ্র সম্ভবত
এই রাত বংশেরই সন্তান ছিলেন। বঙ্গ- সমতটে যখন খড়্গ বংশ ও রাতবংশীয় সামন্ত প্রভুদের
প্রভুত্ব চলছিল তখন গৌড়ে শশাঙ্ক স্বতন্ত্র ভাবে
শাসন চালাতেন।
“In the seventh century Karnasuvarna (possibly in the Murshidabad district)
ranked with Pundravardhana, Tamralipti and the unnamed capital of Samatata as
one of the premier cities of Bengal. It was the Royal seat of Sasanka and of Jayanaga
and was occupied fora time by
Bhaskaravarman of Assam. Close to the city was a magnificent monastery styled
Rattamattika of Red clay which is taken to answer to Rungamutty (Rangamati) on
the Western branch of the Ganges, near
Berhampore in the Murshidabad district.
The Ashrafpur plates refer to Jayakarmanta-vasaka as a seat as a seat of the Khadga kings who possibly ruled over Samatata. The place has been identified with Badkamta near Comila. “
References: The History of Bengal. -1943
Dr( Prof.) R. C. Majumdar
ভারতের ইতিহাসকথা – 1979
ডঃ কিরণচন্দ্র চৌধুরী